বরিশাল নগরের কালুশাহ সড়কের বাড়িতে মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন খায়ের আবদুল্লাহ। গত শুক্রবার বিকেলে
বরিশাল নগরের কালুশাহ সড়কের বাড়িতে মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন খায়ের আবদুল্লাহ। গত শুক্রবার বিকেলে

বরিশাল সিটি নির্বাচন

প্রার্থী হতে চান খায়ের আবদুল্লাহ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে এবারও বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে একক প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করে কেন্দ্রে নাম পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ। তবে সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত মেয়র পদে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তিনি বর্ষীয়ান নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই এবং বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচা।

আগামী বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে অনেক দিন ধরেই নগরে গুঞ্জন ছিল। তবে তিনি এত দিন বিষয়টি খোলাসা করেননি। নানা সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ, বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। এমনকি প্রতি মাসেই একটা বড় সময় বরিশালে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন আগামী মে বা জুনের মধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার কথা ঘোষণা করার পর তিনি আরও বেশি তৎপর হন। গত শুক্রবার বিকেলে তাঁর মা আমেনা বেগমের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দলীয় কর্মসূচির বাইরে তিনি পৃথকভাবে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা গুঞ্জন অনেকটা প্রকাশ্যে এসেছে।

গতকাল শনিবার দুপুরে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে স্বীকার করেছেন, তিনি এবার সিটি করপোরেশনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। দল তাঁকে মনোনয়ন দিলে দল-মত নির্বিশেষে নগরের সর্বস্তরের মানুষের বিপুল সাড়া পাবেন এবং বিজয়ী হবেন বলেও আশাবাদী তিনি।

আবুল খায়ের আবদুল্লাহর বাবা তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতে ৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালরাতে যখন শহীদ হন, আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওই রাতে দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন এবং ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। তবে তিনি কখনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হননি। কয়েক বছর দেশের বাইরে এবং খুলনায় নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই অনেকটা নিভৃতে ছিলেন। তবে মাঝেমধ্যে তিনি বরিশালে আসতেন এবং এলাকার লোকজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতেন। যোগ দিতেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে। থাকতেন ভাড়া বাড়িতে।

আমি কখনো রাজনীতিতে সক্রিয় হইনি। তবে রাজনীতি আমার রক্তে প্রবহমান। নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, আমি বিশ্বাস করি, এই শহরের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এটাকে ইতিবাচক হিসেবে নেবে এবং আমাকে সমর্থন দেবে।
আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ভাই

আবুল খায়ের গত শুক্রবার বিকেলে তাঁর মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে নগরের কালুশাহ সড়কের ভাড়া বাড়িতে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করেন। একই সময়ে নগরের কালীবাড়ি সড়কে সেরনিয়াবাত ভবনে পৃথক দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করে নগর ও জেলা আওয়ামী লীগ। আবুল খায়ের সেরনিয়াবাত আয়োজিত দোয়া অনুষ্ঠানে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকজন বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর (সাবেক শহর) আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দীনসহ জেলা ছাত্রলীগ, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক অনেক নেতা-কর্মীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যোগ দেন।

ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন এমন দুজন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আবুল খায়ের আবদুল্লাহ প্রতিবছরই তাঁর মায়ের জন্য দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। তবে এবারের অনুষ্ঠানের ভিন্ন তাৎপর্য ছিল। কারণ, সামনে সিটি করপোরেশন নির্বাচন। দলের বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা তাঁর রাজনীতিতে আগমনকে ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছেন। তাঁর মার্জিত, উদার দৃষ্টিভঙ্গি সবাইকে আশাবাদী করে তুলেছে। অনুষ্ঠানের ফাঁকে এ নিয়েও ব্যক্তিগত পর্যায়ে কমবেশি আলোচনা হয়েছে।

বরিশাল নগরের রাজনীতি ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন এমন অন্তত পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা বলেন, মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদের আয়োজনের মধ্য দিয়ে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ দীর্ঘদিন পরে হলেও নিজের ইচ্ছার বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছেন। পাশাপাশি দলের ভেতরে একটি বড় অংশের মধ্যে সুপ্ত যে ক্ষোভ রয়েছে, সাবেক অনেক নেতা-কর্মী এবং বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের সেখানে উপস্থিতি এরই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন তাঁরা।

আবুল খায়ের আবদুল্লাহ গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘আমি কখনো রাজনীতিতে সক্রিয় হইনি। তবে রাজনীতি আমার রক্তে প্রবহমান। নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, আমি বিশ্বাস করি, এই শহরের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এটাকে ইতিবাচক হিসেবে নেবে এবং আমাকে সমর্থন দেবে।’

এত বছর পরে কেন রাজনীতিতে আসতে চাইলেন—এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ ছিলেন। আমার মামা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরা কাছ থেকে দেখেছি, সংস্পর্শ পেয়েছি। ফলে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম না, এটা সঠিক নয়। এখন সক্রিয় হতে চাইছি এ জন্য যে বরিশাল নগরের মানুষের যে উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা, যে স্বপ্ন, যে সেবা পাওয়ার কথা ছিল, তা তাঁরা পাননি। আমি যখন এই শহরের মানুষের সঙ্গে কথা বলি, তখন অনুভব করি, তাঁদের যে সম্মান পাওয়া উচিত, তা তাঁরা পাননি। উন্নয়ন পাননি, সেবা পাননি। এই অসহায়ত্ব আমাকে পীড়া দেয়।’ তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘একটি এলাকার উন্নয়নে মূল ভূমিকা রাখেন রাজনীতিবিদেরা। সেখানে রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি ব্যর্থ হয়, তখন তা থমকে পড়ে। বরিশালের মানুষের যা প্রয়োজন, এখন তা পাচ্ছেন বলে আমার মনে হয় না। সচেতন নাগরিকদের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।’

আলাদা দোয়া অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমার মা জীবদ্দশায় ২৫ বছর আমার কাছে ছিলেন। সব সন্তানেরই মায়ের প্রতি আলাদা অনুরাগ থাকে। কিন্তু আমার একটু বেশি, কারণ, তিনি ২৫ বছর আমার সঙ্গে ছিলেন।’

আবুল খায়ের আবদুল্লাহ এমন তৎপরতাকে দলের বিভেদ-বিভক্তি মনে করছেন না বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর। তিনি গতকাল দুপুরে বলেন, সন্তান হিসেবে মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেই পারেন। এটা ছিল তাঁর ব্যক্তিগত আয়োজন। আর সেরনিয়াবাত ভবনের আয়োজন ছিল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের। মহানগর আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তাঁর কোনো বিকল্প নেই এখানে।

দল যদি অন্য কাউকে প্রার্থী দেয়, সে ক্ষেত্রে কী করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘আমরা তো নৌকার বাইরে যেতে পারি না। তবে দল এবং স্থানীয় স্বার্থে এখানে মেয়র হিসেবে সাদিক আবদুল্লাহর বিকল্প নেই।’