রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে কৃষ্ণ রায়কে হলকক্ষে আটকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত দুজনকে কারণ দর্শাতে বলেছে ছাত্রলীগ। গতকাল শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নোটিশে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অপকর্ম থেকে সতর্ক থাকতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ইউনিটের নেতা-কর্মীকে সতর্ক করেছে ছাত্রলীগ।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া ওই দুজন হলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাইম আলী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সোহরাওয়ার্দী হলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিযোগ ওঠা দুই নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। এগুলো সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে বিতর্কে ফেলছে। শুধু এ ঘটনাই নয়, যাঁরা এ ধরনের ঘটনা ঘটাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাইম আলী প্রথম আলোকে রাতেই নোটিশ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তিনি তিন কার্যদিবসের মধ্যেই লিখিত জবাব দেবেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সিট দখল ও নির্যাতনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। আগের সেসব ঘটনায় ছাত্রলীগ কাউকে এ ধরনের নোটিশ দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক নেতা-কর্মী বলছেন, কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের অপকর্ম বেড়েছে। সেগুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। একই সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও অপকর্মে জড়িয়েছেন একাধিক নেতা-কর্মী। এগুলোও সমালোচনা হচ্ছে। এ অপকর্ম আওয়ামী লীগের সফল কাজকে ম্লান করে দিচ্ছে। এ ছাড়া গতকাল শনিবার দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের অপকর্মে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন। সব মিলিয়ে এমন নোটিশ এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১২ ফেব্রুয়ারি রাতে কৃষ্ণ রায়কে হলকক্ষে আটকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের হল শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. নাইম আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমানসহ ছাত্রলীগের সাত থেকে আটজনের বিরুদ্ধে। পরে তিনি ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। নির্যাতনের পাশাপাশি ওই শিক্ষার্থীকে শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কৃষ্ণ রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি নীলফামারী। তাঁর বাবা নেই। দুই বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। টানাটানির সংসারে মেসে থেকে তাঁর পড়াশোনা চালানো কঠিন ছিল। এ কারণে তিনি জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসকের সুপারিশে হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে হলে ওঠেন।
অভিযোগ জমা দেওয়ার পর গত বুধবার এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। এ কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।