ভোলায় শুরু হয়েছে জলচর পরিযায়ী পাখিশুমারি। আজ শুক্রবার সকাল সাতটায় ভোলা খালের খেয়াঘাট থেকে পাখি গবেষক ও বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের (বিবিসি) সহসভাপতি সায়েম উল চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি শুমারি দল ভোলার উত্তর দিকে ট্রলারে যাত্রার মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু করে। দলটি আগামী ৯ দিন (১৩-২১ জানুয়ারি) নদীতে অবস্থান করে শুমারির জন্য তথ্য সংগ্রহ করবেন।
পাখিশুমারির কাজে অংশ নেওয়া সদস্যরা ভোলা খালের খেয়াঘাট থেকে যাত্রা শুরু করেছেন। এরপর তেঁতুলিয়া, ইলিশা, মেঘনা, মেঘনা-তেঁতুলিয়ার সাগর মোহনা, বুড়া গৌরাঙ্গ হয়ে আবার তেঁতুলিয়া নদী হয়ে ২১ জানুয়ারি তাঁরা খেয়াঘাটে ফিরে আসবেন। পাখির বিচরণক্ষেত্র, জীবনমান, স্থানীয় মানুষ ও পরিবেশের নেতিবাচক পরিবর্তন প্রতিরোধে গত ৩৫ বছর ধরে এ শুমারি করা হচ্ছে। উপকূলীয় জলচর পাখিশুমারি দল সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সাল থেকে ভোলায় জলচর পাখিশুমারি শুরু হয়েছে।
পাখিশুমারির দলে আছেন বিবিসির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, পাখি পর্যবেক্ষক ও পর্বতারোহী এম এ মুহিত, সাবেক সহসভাপতি মো. ফয়সাল, পাখিবিশেষজ্ঞ অনু তারেক, নাজিম উদ্দিন খান, বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা, আইইউসিএনের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প সহায়ক জেনিফার আজমিরী, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের গবেষণা কর্মকর্তা শিহাব খালেদীন, বার্ডক্লাবের সদস্য ভ্বরত দা প্রমুখ।
পাখিগণনার পদ্ধতি সম্পর্কে এম এ মুহিত বলেন, ‘আমরা পাখি গণনা করি ব্লক মেথডে (পদ্ধতি)। গণনার কাজে টেলিস্কোপ (দূরবীক্ষণ যন্ত্র) ব্যবহার করি। এ যন্ত্র ব্যবহার করে দূরের পাখি একটা একটা করে গণনা করা হয়। তবে যখন অনেক পাখি ঝাঁক ধরে থাকে, তখন অনুমান করে গণনা করা হয়। এটা পাখি পর্যবেক্ষকদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ওপর নির্ভর করে। আমাদের দলের সবার কাছে দূরবীক্ষণ যন্ত্র থাকে। দলের একাধিক জন পাখির সংখ্যা অনুমান করেন। পর সবার মতামত নিয়ে যেটা গ্রহণযোগ্য, সেটা চূড়ান্ত হিসেবে নেওয়া হয়। তারপরও ঝাঁক গণনার ক্ষেত্রে হিসাব শতভাগ সঠিক হয় না। কিছুটা কম–বেশি হয়।’
দলের পাখিবিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের মধ্যে ভোলায় সবচেয়ে বেশি জলচর পরিযায়ী পাখি আসে, যা মোট পাখির প্রায় ৬০ ভাগ। এ অঞ্চলে অনেক বিপন্ন পাখিও দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে প্রতিবছর পাখিশুমারি হয়। ভোলার পাখিশুমারি তারই অংশ। মূলত ভোলার চারপাশের নদী ও সাগর মোহনার মধ্যে জেগে ওঠা চরে ঘুরে জলচর পাখি গণনা করা হয়।
পাখিবিশেষজ্ঞ সায়েম উল চৌধুরী বলেন, পাখি পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শীতকালেই এ দেশে পরিযায়ী পাখি আসে। পাখিশুমারির মাধ্যমে পাখির সংখ্যা, পাখির অবস্থান, উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ—এসব জানা যায়। পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া ফ্লাইওয়েসহ অনেকগুলো দেশের মধ্য দিয়ে পাখি বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশে যদি পাখি কমে যায়, তাহলে মনে করতে হবে, এখানে কোনো সমস্যা আছে। অথবা উড়ালপথে সমস্যা আছে। সমস্যার আলোকে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। এতে পাখিরও উপকার হবে। সামগ্রিকভাবে স্থানীয় মানুষের ও পরিবেশের উপকার হবে।