কষ্টে দিন কাটছে নিহত মামুনের পরিবারের

মামুন মৃধা
মামুন মৃধা

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় একমাত্র ছেলে মামুন মৃধাকে হারিয়েছেন মোতালেব মৃধা ও মোর্শেদা বেগম দম্পতি। বৃদ্ধ বয়সে তাঁদের শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। তাঁদের দিন কাটছে কান্না আর হতাশায়।

মামুনের বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার আলীপুর গ্রামে। ২০০৩ সালে স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ঢাকার কবি নজরুল ইসলাম কলেজে ভর্তি হন মামুন। তিনি ওই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

সেখান থেকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গিয়েছিলেন। দাঁড়িয়েছিলেন একেবারে মঞ্চ ঘেঁষে। সেদিন গ্রেনেড হামলায় তিনি নিহত হন।

ছেলের শোকে কাতর মা মোর্শেদা বেগম বলেন, ‘আমার মামুনরে মাইরা ফালাইছে। আজ মামুন বাঁইচা থাকলে ৩৫ বছরের যুবক থাকত। আমাদের দেখত। কিন্তু এখন কে আমাগো দেখবে? একটা মাইয়া বাড়িতে আছে। হেই আমাগো দেইখ্যা রাখে। মামুনের বাবাও এখন কোনো কাজ করতে পারে না। এখন অনেক কষ্টে দিন কাটছে।’

মামুনের মৃত্যুর পর ছোট বোন রুবিনা মা–বাবার কাছে থেকে তাঁদের দেখভাল করছেন।

মামুনের বৃদ্ধ বাবা মোতালেব মৃধা ও মা মোর্শেদা বেগমের শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। শারীরিক দুর্বলতায় মোতালেব মৃধা কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। মোর্শেদা বেগমের দৃষ্টিশক্তি ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া হাড়ের ক্ষয় রোগের কারণে হাঁটাচলা করতে পারছেন না।

মোতালেব মৃধা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ঢাকায় কাজ করেছি। এখন ছেলের কবর টানে, তাই গ্রামে চলে এসেছি। নানা রোগে ধরেছে, এখন আর কাজ করতে পারি না। বসতভিটে ছাড়া আর তো কিছু নেই।’ তিনি বলেন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন।

ব্যাংকে জমা রাখা ওই টাকার মুনাফা দিয়ে চলছে তাঁদের সংসার। এ ছাড়া তাঁকেসহ তাঁর চার মেয়েকে প্রধানমন্ত্রী তিন লাখ টাকা করে দিয়েছেন। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে তাঁর স্বামী–সন্তান নিয়ে তাঁদের বাড়িতে থেকে দেখাশোনা করছেন। বর্তমানে প্রতি মাসে ব্যাংক থেকে যে মুনাফা আসে, তা দিয়ে সংসার চলছে না। চিকিৎসাও হচ্ছে না।

ক্ষোভ প্রকাশ করে মোতালেব মৃধা বলেন, ‘এখন আর আমাদের কেউ খোঁজ রাখে না। ২১ আগস্ট এলেই নেতা-কর্মীরা বাড়িতে আসে, কবর জিয়ারত করে চলে যায়। ছোট মেয়ে রুবিনার একটা চাকরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই।’