মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় বেওয়ারিশ কয়েকটি কুকুরের কামড়ে নারী, শিশুসহ ৫৫ জন আহত হয়েছেন। আজ রোববার সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার এই বাসিন্দারা কুকুরের কামড়ে আহত হন। এ ছাড়া গতকাল শনিবার রাত থেকে আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত বিড়াল ও শিয়ালের কামড়ে আরও ২০ জন আহত হয়েছেন।
এই রোগীরা মানিকগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালের টিকাদান কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স মো. সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আহত ব্যক্তিদের বাড়ি মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার পশ্চিম সেওতা, উত্তর সেওতা, পশ্চিম দাশড়া, বেউথাসহ আশপাশের এলাকার।
হাসপাতাল, রোগী ও তাঁদের স্বজন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল আটটার দিকে পশ্চিম সেওতা গ্রামে কালো ও সাদা রঙের একটি কুকুর এক ব্যক্তির পায়ে কামড় দেয়। এরপর কুকুরটিকে মারতে স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করলে কুকুরটি বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তখন কুকুরটি আশপাশে যাকে পায় তাকেই কামড় দিতে শুরু করে। এভাবে কুকুরটি চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে ৪০ জনের বেশি মানুষকে কামড় দিয়ে জখম করলে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আজ দুপুরে উত্তর সেওতা এলাকায় কালো রঙের একটি কুকুর আরও কয়েকজনকে কামড় দেয়। এ ছাড়া পশ্চিম দাশড়া ও বেউথা এলাকায় বেওয়ারিশ কয়েকটি কুকুর কয়েকজনকে কামড় দিয়ে আহত করে।
হাসপাতালের টিকাদান কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে সকাল নয়টা থেকেই একের পর এক কুকুরের কামড়ে মারাত্মক জখম রোগীরা আসতে থাকেন। তাঁদের মধ্যে নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী ব্যক্তি রয়েছেন। আহত অধিকাংশ ব্যক্তির পায়ের হাঁটু থেকে নিচ পর্যন্ত জখম রয়েছে। অনেকের হাতেও কামড় আছে। বিশেষ করে শিশু ও নারীদের ক্ষত বেশি। আজ সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত কুকুড়ের কামড়ে আহত ৫৫ জন, বিড়ালের কামড়ে আহত ১৯ জন এবং শিয়ালের কামড়ে আহত এক রোগীকে জলাতঙ্ক রোধে টিকা দেওয়া হয়েছে।
আজ বেলা একটার দিকে হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, কুকুড়ের কামড়ে আহত কয়েক রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এই রোগীদের পায়ে কামড়ের রক্তাক্ত জখম দেখা গেছে।
কুকুড়ের কামড়ে আহত পশ্চিম সেওতা গ্রামের ইউসুফ আলী প্রথম আলোকে বলেন, আজ দুপুরে বাড়ি থেকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাচ্ছিলেন তিনি। দুপুর ১২টার দিকে উত্তর সেওতা এলাকায় কাঁচাবাজারের পাশে সড়কে আসার পরপর কালো রঙের একটি কুকুর কোথা থেকে এসে তাঁর ডান পায়ে হাঁটুর ওপরে কামড় দেয়। পরে স্থানীয় লোকজন ধাওয়া দিলে কিছু দূর যাওয়ার পর কুকুরটি আরও কয়েকজনকে কামড় দেয়।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পশ্চিম সেওতা গ্রামের গৃহবধূ বিউটি বেগম (৪৫) বাড়ির পাশে পুকুরে গোসল করতে যাওয়ার পথে একটি কুকুর তাঁর পায়ে কামড় দেয়। পরে তিনি ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতালে কথা হলে বিউটি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হুট করে কোন থেকে যে কুকুরটা আইস্যা কামড় দিল! লোকজন মারতে গেলে কুকুরটা দৌড়ে চলে যায়। কামড়ে রক্ত বের হওয়ার পর জ্বালাপোড়া করছে। ভয় লাগতাছে, কী যে অয়!’
মানিকগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ বলেন, শুধু পশ্চিম সেওতা এলাকায় একটি কালো রঙের কুকুর ১৫ থেকে ১৬ জনকে কামড় দিয়েছে। কুকুরের কামড়ে কারও কারও মারাত্মক জখম হয়েছে।
কুকুরকে টিকা দেওয়ার বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুই বছর ধরে পৌর এলাকায় কুকুরদের টিকা দেওয়া হয় না। বিষয়টি নিয়ে পৌর পরিষদে আলোচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, হাসপাতালে নিতে আসা কুকুর-বিড়ালের কামড়ে আহত রোগীদের জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে টিকার সংকট নেই। বেওয়ারিশ কুকুর থেকে দূরে থাকতে সচেতন হতে হবে।