পাড়া ছেড়ে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলা সদরে আশ্রয় নেওয়া পাইংখিয়ংপাড়ার বম জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে খামতাংপাড়ার খেয়াং জনগোষ্ঠীর লোকজন এখনো পাড়ায় ফিরে যেতে পারেনি। নিরাপত্তাহীনতায় তাঁরা বাড়ি ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে থাকা খেয়াংরা।
৭ এপ্রিল রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কের উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে খামতাংপাড়ায় দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর গোলাগুলিতে আটজন নিহত হন বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ–গণতান্ত্রিক) মধ্যে এই গোলাগুলিতে নিহত ব্যক্তিদের সবাই বম জনগোষ্ঠীর।
ওই ঘটনার পর আতঙ্কে খামতাংপাড়াবাসীর একাংশ রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ও আরেকাংশ রুমা উপজেলা সদরে আশ্রয় নেয়। এর দুই দিন পর ৯ এপ্রিল পাইংখিয়ংপাড়ার ৫৩টি বম পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে রোয়াংছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসে আশ্রয় নেয়। তাঁরা এক সপ্তাহ থাকার পর গত রোববার আবার পাড়ায় ফিরে গেছেন।
পাইংখিয়ংপাড়ার কার্বারী (পাড়া প্রধান) পিতর বম মুঠোফোনে জানিয়েছেন, তাঁরা এখন পাড়ায় রয়েছেন। তবে রোয়াংছড়ি সদর ছাড়া অন্যদিকে যাঁরা গেছেন, তাঁরা এখনো ফিরে না এলেও কাল-পরশুর মধ্যে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, খামতাংপাড়ার ৪০টি পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১৫৩ জন খেয়াং বিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়ে রয়েছেন। তাঁদের খোঁজখবর নিতে এসেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী। তিনি সবাইকে পাড়ায় ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিলেন।
ইউএনও বলছিলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। খেয়াংদের ফিরে যাওয়া উচিত। এখন জুমের মৌসুমে জুমের কাজ না করলে আগামীতে তাঁরা আরও বেশি সংকটে পড়বেন। এ সময় খেয়াংরা নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরেন। ইউএনও জানান, বাড়ি ফিরে গেলে খামতাংপাড়া খেয়াংরা নিরাপত্তাহীনতায় পড়বে সে রকম কোনো তথ্য নেই।
উশৈপ্রু খেয়াং, শৈহ্লা খেয়াং জানালেন, খামতাংপাড়ার ৮২ পরিবারের মধ্যে রোয়াংছড়ি উচ্চবিদ্যালয়ে ৪৮টি পরিবারের ১৯৭ জন আশ্রয় নিতে এসেছেলেন। এর মধ্যে ৮টি পরিবারের ৪৪ জন বান্দরবানে আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছে চলে গেছেন। রুমা উপজেলা সদরে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে ২২টি পরিবার। অন্য পরিবারগুলো বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। তাঁরা এখন প্রশাসন, স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া খাবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। ভয়ে ভয়ে কয়েকবার বাড়িঘর দেখতে গিয়েছিলেন। তখন দেখেছেন অনেকের ফেলে আসা হাঁস–মুরগি, শুকর, ধান-চাল নেই।
বমরা ফিরে গেলেও তাঁরা ফিরে যাচ্ছেন না কেন, জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, গত ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় তাঁদের পাড়ায় অবস্থান নিয়ে থাকা ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিকের ওপর কেএনএফের সদস্যরা হামলা চালিয়েছেন। পরের দিন (৭ এপ্রিল ) সকালে গুলির শব্দ শোনার পর নিহত আটজন বমের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখন ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক মনে করে খেয়াংদের সহযোগিতায় কেএনএফ হামলা চালিয়েছে। আবার একইভাবে কেএনএফ মনে করে খেয়াংপাড়াবাসীর কারণে আটজন বম নিহত হয়েছেন। অথচ ওই দুই দলের সঙ্গে খেয়াংদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বমরা ফিরে বাড়ি গেলেও উভয় সংকটে তাঁরা (খেয়াংরা) বাড়ি যাওয়ার জন্য নিরাপদ মনে করছেন না।
রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মান্নান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কেএনএফ ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিকের গোলাগুলিতে আটজন নিহত হওয়ার ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। বমরা লাশ গ্রহণ করে সমাধিস্থ করলেও মামলা করার জন্য কেউ আসেননি।