কুমিল্লায় গত শুক্রবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মিছিলে ধাওয়া ও হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিকের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির একদল প্রতিনিধি আজ রোববার বেলা তিনটায় কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নানের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে দেখা করে ওই দাবি জানান। এ ঘটনায় সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার বকসী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দাখিল করেন।
গত শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুমিল্লা শহরে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বিক্ষোভ মিছিল বের করে। সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জের মেয়র ফয়সাল বিপ্লবের ‘সাম্প্রদায়িক গালিগালাজ’, কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের ‘দুর্গাপূজাকে কটাক্ষ করে মন্তব্য’, কুড়িগ্রামের চারণ কবি রাধাপদ রায়ের ওপর হামলা এবং বিভিন্ন জায়গায় পূজার প্রাক্কালে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে এই বিক্ষোভ-মিছিলের আয়োজন করে। মিছিলটি নগরের রানীরবাজার রামঠাকুর আশ্রম থেকে কান্দিরপাড় পুবালি চত্বরের উদ্দেশে রওনা হয়। কর ভবন এলাকায় আসামাত্র পুলিশের বাধায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
তখন মিছিলে থাকা নারী-পুরুষের একটি দল কর ভবনের দক্ষিণ পাশের সড়ক দিয়ে যাচ্ছিল। আরেকটি অংশ রানীরবাজারে ফিরে যাচ্ছিল। হঠাৎ কর ভবন এলাকায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি মিছিল এসে হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান পরিষদের লোকজনকে ধাওয়া করে। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে হামলা চালায়। এ সময় বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ আহত হন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ বেলা তিনটায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিকের নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতারা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মিলন দত্ত, পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র নাথ, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব, নারায়ণ সাহা মণিসহ উপস্থিত ছিলেন।
নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘প্রশাসন নিজেই এ ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে পারে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা পুলিশ সুপারকে বলেছি, দায়ীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে। প্রশাসন বলেছে, তারা এ ঘটনায় তত্পর আছে। আমরা আরও বলেছি, দোষীদের গ্রেপ্তার করতে। সামনে দুর্গাপূজা যেন শান্তিপূর্ণ হয়, সেই দাবিও জানিয়েছি।’
সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, ‘ওনারা এসেছেন (কেন্দ্রীয় নেতারা)। আমাদের কাছে বিভিন্ন কথা বলেছেন। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা মামলা নেব। এর বাইরে এটা নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।’
পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করার পর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা নগরের ঠাকুরপাড়া শ্মশানকালী বাড়ি মন্দিরে যান। সেখানে সংগঠনের কুমিল্লার নেতাদের কাছে শুক্রবারের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ শোনেন। নেতারা কুমিল্লা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার বকসীর বক্তব্য নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গত শুক্রবারের ঘটনায় আহত নারী ও পুরুষদের কয়েকজন।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কুমিল্লা জেলার সভাপতি চন্দন রায়, জাতীয় হিন্দু জোটের কুমিল্লা শাখার সাধারণ সম্পাদক মানিক ভৌমিক, কার্যকরী সদস্য অমিতাভ ঘোষ, পূজা উদ্যাপন কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক সজল পাল, বাংলাদেশ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবীর নন্দী বাবু, সহসভাপতি রতন দাস, নির্মল গোস্বামী ও কিংকর দেবনাথ।
প্রসঙ্গত, ৪ অক্টোবর শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক সভা হয়। ওই সভায় কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন মদমুক্ত পূজা করার আহ্বান জানান। কোনো পূজামণ্ডপে মদ খাওয়া চলবে না বলে বক্তব্য দেন। পরে এ নিয়ে ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এক বিবৃতি দেয়। এতে আ ক ম বাহাউদ্দিনকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিলে খেসারত দিতে হবে উল্লেখ করা হয়। সেই সঙ্গে সংগঠনটি ১৩ অক্টোবর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় সারা দেশে। ওই ঘোষণার পর সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন তাঁর অনুসারী হিন্দু নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন। একই সঙ্গে কান্দিরপাড়ে অবস্থান নেওয়ার জন্য যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে দায়িত্ব দেন।