সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবি নিয়ে উপাচার্য মো. আলিমুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। তাই শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

আজ সোমবার বিকেলে বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন। এর আগে বেলা একটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের ৩০ সদস্যের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। এতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার, জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালকের পদত্যাগসহ আট দফা দাবি উত্থাপন করেন।

বৈঠক অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী জানান, আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র সার্বক্ষণিক খোলা রাখাসহ শিক্ষার্থীদের দুই দফা দাবি মেনে নেওয়া হয়। বাকিগুলো পূরণে কেবল আশ্বাস দেওয়া হয়, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। এমনকি শিক্ষার্থীরা যাঁদের পদত্যাগ চেয়েছেন, সে ব্যাপারেও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত বৈঠকে আসেনি। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক হওয়া সত্ত্বেও তা পূরণে কালক্ষেপণের চেষ্টা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাই শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে আবার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

শিক্ষার্থীরা বৈঠক থেকে বেরিয়ে আবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি করেন। এ সময় তাঁদের প্রতিটি দাবি মেনে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি শিক্ষার্থীরা অনুরোধ জানান।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল রোববার ও আজকের মতো আগামীকাল মঙ্গলবার ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি পালন করবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

যোগাযোগ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা লম্বা সময় ধরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করলাম। আমরা আশা করেছিলাম, সমস্যার সমাধান হবে। শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা চালু হবে। আমাদের উপাচার্য আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁদের যাবতীয় দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করবেন। আর যেসব অভিযোগ আছে, সেসব তদন্ত কমিটি করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেবেন। তখন তাঁরা (শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল) বললেন, “ঠিক আছে স্যার, আমরা নিচে ফ্রেন্ডদের সঙ্গে কথা বলে আসি।” পরে নিচ থেকে এসে তাঁরা আমাদের কথা একসেপ্ট (গ্রহণ) করল না।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও এলাকাবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের সামনে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে ছাত্রদলের সাঁটানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনার জেরে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী ছাত্রদল ও বহিরাগত ব্যক্তিদের মারধরের শিকার হন। পরে সেনাসদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

সংঘর্ষের রাতেই কেন্দ্রীয় ছাত্রদল তাৎক্ষণিকভাবে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ উল্লেখ করে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক এক নেতাকে সংগঠনের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি এই সংঘর্ষের প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটনে কেন্দ্রীয় কমিটি দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মারধরের শিকার শিক্ষার্থীদের ‘ছাত্রলীগ’ ট্যাগ দিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া গত শনিবার রেজিস্ট্রার এক বিজ্ঞপ্তিতে ব্যানার ও ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ বলে আখ্যা দেন। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আট দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন।