রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য বললেন, ‘ছাত্রলীগ নেত্রীর বক্তব্য সীমা লঙ্ঘনের শামিল’

ফারজানা শশীর
ফারজানা শশীর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা শশীর ফেসবুক লাইভের বক্তব্য ‘সীমা লঙ্ঘনের শামিল’ বলে মন্তব্য করেছেন সহ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘ওই ছাত্রলীগ নেত্রী আমাদের নিয়োগ নিয়ে কথা বলেছে। আমরা যখন দল করেছি, যোগ্যতা অর্জন করেছি, তখন তাঁর জন্মই হয়নি। আমাদের সম্পর্কে কথা বলতে হলে আমাদের বিষয়ে জানতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিয়োগ দিয়ে ভুল করেছে, এত বড় স্পর্ধা তাঁর দেখানো উচিত হয়নি। এটি তাঁর সীমা লঙ্ঘন করা বক্তব্য।’

গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে ফারজানা শশী প্রশাসন ও সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–উপদেষ্টা, প্রক্টোরিয়াল বডি, প্রক্টর, ভিসি-প্রোভিসির নিয়োগ দেওয়াটা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ভুল সিদ্ধান্ত বলে তিনি মন্তব্য করেন। দ্রুত সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সৃষ্টি হয় আলোচনা-সমালোচনার। পরে তিনি ফেসবুক লাইভ ভিডিওটি সরিয়ে নেন।

সহ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে তাঁর ভাবা উচিত, তাঁর এ বিষয়ে বলার এখতিয়ার রয়েছে কি না। ওই শিক্ষার্থীর এ বিষয়ে বলার জায়গা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় চলবে তার নিজস্ব বিধিবিধান অনুযায়ী। কেউ যদি বিধি লঙ্ঘন করেন, তিনি যে–ই হোন না কেন, তিনি বিধি লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন।’

উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের কাছ জানতে চাইলে বলেন, ‘এই ধরনের অর্বাচীন বক্তব্য সুখকর নয়। এ বিষয়ে খুব বেশি কিছু বলার নেই। তবে আমাদের সবার কথা বলার আগে লক্ষ্য রাখা উচিত, আমি কী করছি, কী বলছি, আমার অবস্থান কী। তা ছাড়া আমি দলীয় পরিচয়ে হাইলাইটস হতে চাই না।’ ছাত্রলীগের ওই নেত্রী এমন মন্তব্য করতে পারেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি নির্ভর করছে তাঁর শিক্ষাগত জ্ঞান, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ধারণা ও শিক্ষকদের প্রতি সম্মানবোধ কতটুকু।

আমাদের ৯৫ শতাংশই শিক্ষার্থীই ভালো। তাঁদের সঙ্গে আমি মিশেছি ও খেলাধুলা করেছি। তবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি, কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর (৫ শতাংশ) ডাজেন্ট মেক সেন্স।’

গত বৃহস্পতিবার রাতে রহমতুন্নেছা হল ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না আক্তার ওরফে তন্বীর ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও অবৈধভাবে হলে থাকায় তাঁকে কক্ষ ছাড়ার নির্দেশ দেয় হল প্রশাসন। কিন্তু তিনি হল ছাড়েননি। পরদিন উল্টো হলের গেটে তালা দেন তামান্নাসহ হল ছাত্রলীগের নেত্রীরা। পরে মানবিক কারণে ওই নেত্রীকে হলে থাকতে দিয়েছে হল প্রশাসন।

এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ঐশী নামের এক ছাত্রলীগ নেত্রীর রুম সিলগালা করে হল কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকেরা সংবাদ প্রকাশ করায় লাইভে সাংবাদিক ও প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সাংবাদিকদের বিষয়ে মন্তব্যর পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (রাবিসাস) সভাপতি তৌসিফ কাইয়ুম বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বর্তমানে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য চলছে। মূলত তাদের নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে সাংবাদিকদের ওপর দায় চাপাচ্ছে তারা।’