এ কে আব্দুল মোমেন ও ইমরান আহমদ
এ কে আব্দুল মোমেন ও ইমরান আহমদ

সিলেটে দুই মন্ত্রীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, ৪ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে দুটি আসনে অনেকটাই নিরুত্তাপ প্রচার-প্রচারণা চলছে। এই দুই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দুজন মন্ত্রী। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তাঁরা অনেকটাই নির্ভার। এর ফলে আসন দুটিতে ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন’ নির্বাচন হবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্যদিকে বাকি চারটি আসনে ভোটাররা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন।

ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। মোমেন ছাড়াও সিলেট-১ আসনে ইসলামী ঐক্যজোটের (আইওজে) ফয়জুল হক (মিনার), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ইউসুফ আহমদ (আম), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ সোহেল আহমদ চৌধুরী (ডাব) এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আবদুল বাছিত (ছড়ি) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

অন্যদিকে সিলেট-৪ আসনে ইমরান ছাড়াও প্রার্থী হয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের নাজিম উদ্দিন (মিনার) এবং তৃণমূল বিএনপির মো. আবুল হোসেন (সোনালী আঁশ)। দুই মন্ত্রীর বিপরীতে শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় মোমেন ও ইমরানের জয় পাওয়া অনেকটাই সহজ বলে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন।

স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর), সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ), সিলেট-৫ (কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ) এবং সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এ চারটি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাশাপাশি অন্য দলের প্রার্থীদেরও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে।

সিলেট-২ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট-৫ আসনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ এবং সিলেট-৬ আসনে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে তাঁদের বিপরীতে প্রতিটি আসনেই এক বা একাধিক শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন।

সিলেট-২ আসনে নৌকার শফিকুর রহমান চৌধুরীকে বর্তমান সংসদ সদস্য ও গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য) এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহিয়া চৌধুরীর (লাঙ্গল) সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হবে। সিলেট-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের সঙ্গে শক্ত লড়াই করেই জিততে হবে।

সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে মূল লড়াই হবে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন আনজুমানে আল ইসলাহের সভাপতি ও ‘ফুলতলি হুজুরের’ ছেলে মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী (কেটলি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আহমদ আল কবির (ট্রাক)। এ আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির শাব্বীর আহমদ (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির কুতুব উদ্দীন আহমদ শিকদার (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ কংগ্রেসের বদরুল আলম (ডাব) এবং মুসলিম লীগের (বিএমএল) খায়রুল ইসলাম (হাত-পাঞ্জা)।

তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন এবং জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিনও (লাঙ্গল) শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। মূলত এই তিনজনের সঙ্গেই সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলামকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের ৬টি আসনে মোট প্রার্থী ৩৫ জন। জেলায় মোট ভোটার ২৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮৮ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ১৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৫৩ জন এবং নারী ১৩ লাখ ২১ হাজার ২২১ জন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এটা অংশগ্রহণমূলক কোনো নির্বাচন নয়। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় ভোটারদের আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে। একপেশে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগই বিজয়ী হবে। নৌকার প্রার্থীদের সিলেটের যে চারটি আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে, সেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে পরিচিত তৃণমূল বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও গণফোরামের শক্তিশালী প্রার্থী আছেন। অন্য দুটো আসনে নৌকার বিপরীতে শক্তিশালী কোনো প্রার্থীই নেই।