যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে বাদীর পরিবারকে বিএনপির নেতা–কর্মীরা হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলার বাদী সম্প্রতি এ অভিযোগ করেছেন।
ধর্ষণের ঘটনায় হওয়া মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাঘারপাড়া বারভাগ আলিয়া মাদ্রাসার পেছনে একটি বাগানে পাঁচ বছরের এক শিশুকে এক কিশোর ধর্ষণ করে। ঘটনার পরদিন বাঘারপাড়া থানায় ভুক্তভোগী শিশুর নানা বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এ ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় বিএনপির নেতারা মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিশুটির পরিবারের সদস্যরা।
ওই শিশুর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, আসামিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করছেন উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব বিশ্বাস ও স্থানীয় বিএনপি নেতা সেলিম রেজা।
ধর্ষণের শিকার শিশুর স্বজনেরা জানান, কন্যাশিশুটি দীর্ঘদিন ধরে নানার বাড়িতে থাকে। ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়ির কোথাও তাকে খুঁজে না পেয়ে আলিয়া মাদ্রাসার পেছনে বাগানে গিয়ে নানাবাড়ির লোকজন দেখতে পান, শিশুটি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই কিশোর শিশুটি রেখে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শিশুটির স্বজনেরা জানান, অভিযুক্ত কিশোরের চাচা স্থানীয় বিএনপি নেতা। ওই কিশোরের চাচার সঙ্গে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব বিশ্বাসসহ কয়েকজন নেতা যশোর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে কিছু টাকা নিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। তাঁদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গ্রামছাড়া করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে টাকার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করার হুমকি দিয়ে আসছেন তাঁরা।
মামলার বাদী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলা করার পর থেকেই বিএনপির নেতারা মামলা তুলে নিতে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছেন। আমি মামলা তুলব না। হুমকির বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার প্রক্রিয়া চলছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জামদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব বিশ্বাসের মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শামছুর রহমান বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনার পর মাহবুব আমার কাছে এসেছিল এ বিষয়ে কী করা যায় জানতে। আমি তাকে বলেছি, ওই ঘটনা থেকে দূরে থাকো। ফলে মাহবুব ওই ঘটনা নিয়ে কোনো ধরনের হুমকি দেয়নি। তবে আত্মীয় হওয়ায় বিএনপির ওই নেতা ওই পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে দেনদরবার করলেও করতে পারে। তবে সেটা তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়। এর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।’
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) বজলুর রশীদ বলেন, ধর্ষণের শিকার মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এখনো প্রতিবেদন হাতে আসেনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাঘারপাড়া থানার উপপরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।’ বাদীপক্ষকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।