ঘরে ময়লা পানি, দুর্ভোগ 

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে ডিএনডি এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। নোংরা পানি বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে।

ঘরে ঢোকা ময়লা পানি সেচে বাইরে ফেলছেন বাড়ির মালিক মিজানুর রহমান। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার জেলা পরিষদ এলাকায়

নারায়ণগঞ্জ শহরের পূর্ব ইসদাইর এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে তাঁর টিনশেডের ঘরে ঢুকে পড়েছে পাশের খালের ময়লা ও আবর্জনামিশ্রিত পানি। সেচে হাঁটুসমান পানিনিষ্কাশনের চেষ্টা করছিলেন মিজানুর। পাশেই তাঁর বৃদ্ধ বাবা আফজাল হোসেন বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমরা এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই।’

টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রকল্প এলাকার অধিকাংশ স্থানেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। আশপাশের অনেক বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। বাসিন্দারা দরজার সামনে ইটের বাঁধ তৈরি করে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। বেশির ভাগ ঘরের মেঝেতে ঢুকে পড়েছে নোংরা পানি। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, এত পানি কখনো হয়নি। দরজার সামনে তিনটি ইট দিয়ে উঁচু করে বাঁধ দিয়েও পানি আটকানো যায়নি।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সঙ্গে যুক্ত সদর উপজেলার দক্ষিণ সস্তাপুর সড়ক। সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পানি নিষ্কাশনের খাল। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গত সোমবার বিকেল থেকে রাতভর ভারী বৃষ্টিতে সড়ক হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে গেছে। এ সড়ক দিয়ে দক্ষিণ সস্তাপুর, সস্তাপুর, ইসদাইর, কোতালেরবাগ, কুতুবআইল এলাকার পাঁচটি গ্রামের অন্তত ২৫ হাজার মানুষের যাতায়াত। স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলছিলেন, নোংরা পানি বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে।

দক্ষিণ সস্তাপুর সড়কটি পানিনিষ্কাশন খালের ময়লা–আবর্জনামিশ্রিত পানিতে তলিয়ে গেছে। এই পানি মাড়িয়ে লোকজনকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। শুধু দক্ষিণ সস্তাপুর নয়, ডিএনডির ভেতরের অনেক জায়গায় বাড়িঘরও পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে আছেন কয়েক লাখ মানুষ। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান তাঁরা।

ডিএনডি প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে একনেকে ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প অনুমোদিত হয়। কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ তিন দফা বেড়ে ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার কথা রয়েছে। ৫১৮ কোটি ১৯ লাখ টাকার প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৭৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

চলমান জলাবদ্ধতা নিরসনে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ডিএনডি প্রকল্পের খাল পরিষ্কার ও খননকাজ চালানো হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবারও দক্ষিণ সস্তাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভেকু দিয়ে পানিনিষ্কাশনের খাল পরিষ্কার এবং খনন করতে দেখা গেছে।

তবে জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান ডিএনডিবাসী। উত্তর মাসদাইর গাবতলী এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএনডি প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও আমরা এখনো সুফল পাচ্ছি না।’