গাজীপুরে নৌকাভ্রমণের নামে অশ্লীল নাচগান, মাদকের আসর

উঠতি বয়সী তরুণদের আনাগোনা বেশি। নৌকাগুলো মাঝনদীতে গেলে শুরু হয় মাদক সেবন। উচ্চ শব্দে গান বাজানোর পাশাপাশি চলে অশ্লীল নৃত্য।

গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় তুরাগ নদে নৌকাভ্রমণের নামে নৃত্য

শ্রাবণের শেষ সপ্তাহ। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদীতে পানি থই থই করছে। পাড় থেকে দেখা মেলে নদীতে ভেসে চলছে ইঞ্জিনচালিত ছোট-বড় বাহারি নৌকা। সেখান থেকে ভেসে আসছে বাদ্যযন্ত্র আর গানের সুর। আবহমান কাল ধরে এভাবেই নৌকাভ্রমণে মানুষ আনন্দের খোরাক জোগান। তবে ইদানীং নৌকাভ্রমণের নামে দেখা মিলছে অশ্লীল নাচগান, অসামাজিক কাজ আর মাদকের আড্ডা।

গাজীপুরের তুরাগ নদ, মকস বিলসহ আশপাশের নদ-নদীগুলোতে নৌকাভ্রমণের নামে এমন অশ্লীলতা দেখা যাচ্ছে। বিনোদনের নামে উচ্চ শব্দে গান বাজানো থেকে শুরু করে মেয়েদের নিয়ে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ। নৌকায় অবাধে চলে মাদক সেবন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গেও ঝগড়া-বিবাদের ঘটনা ঘটছে।

গাজীপুর মহানগরীর কড্ডা এলাকার বাসিন্দা রাজীব সরকার বলেন, এখন নৌকাভ্রমণ মানেই উচ্চ শব্দে বাজনা বাজানো। নৌকায় নাচ, মাদক সেবনসহ নানা অপকর্ম চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরের কড্ডা, মজলিশপুর, ভাওয়াল মির্জাপুর, সাকাশ্বর, চা-বাগান এলাকার তুরাগ নদের অংশ ও কালিয়াকৈর বাজারের চাপাইর ব্রিজ, বরইবাড়ি ও মকস বিলের বিভিন্ন অংশে প্রতিদিন নৌকাভ্রমণে আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বিভিন্ন এলাকার উঠতি বয়সী তরুণদের আড্ডাই বেশি। নৌকাগুলো মাঝনদীতে গেলে শুরু হয় মাদক সেবন। নৌকায় উচ্চ শব্দে গান বাজানোর সঙ্গে চলে অশ্লীল নৃত্য। এতে নারী, পুরুষ, হিজড়া, শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। তবে এ নিয়ে প্রশাসনের কোনো  তৎপরতা দেখা যায় না। বিভিন্ন সময় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে তাঁদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা ও ঝগড়া-বিবাদ হয়।

গাজীপুরের কড্ডা ও কালিয়াকৈর উপজেলার মকস বিলঘাটসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কিছুক্ষণ পরপর চলছে ছোট-বড় নৌকা। নৌকাগুলো বিভিন্ন ভঙ্গিতে সাজানো। প্রতিটি নৌকায় ৫০ থেকে ৬০ জন। হিন্দি ও ডিজে গানের তালে তালে চলছে নারী-পুরুষের অশ্লীল নৃত্য। তাঁদের বেশির ভাগই কিশোর ও তরুণ।

কালিয়াকৈর উপজেলার বাঁশতলী গ্রামের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, গত শুক্রবার মুসল্লিরা জুমার নামাজ আদায় করছিলেন। নামাজের সময় পাশের তুরাগ নদে সাউন্ড বাজিয়ে নৌকা যাচ্ছিল। কিশোর ও তরুণ বয়সের ছেলেমেয়েরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় এমনভাবে নাচানাচি করছিলেন, তাতে নদপাড়ের বাসিন্দাদের লজ্জায় পড়তে হয়।

গাজীপুরের টঙ্গী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মো. আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রায়ই তুরাগ নদে অভিযান চালাই। এ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে অনেককেই ধরে নিয়ে এসেছি। তাঁদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কয়েক দিন অভিযান বন্ধ ছিল। এখন থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।’