নিজের এনআইডিতে অন্যের ছবি, ১৪ বছর পর সংশোধন

পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সামছুল হক
ছবি: প্রথম আলো

১৪ বছর আগে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হাতে পান মো. সামছুল হক। নাম-ঠিকানা সব ঠিক থাকলেও এনআইডিতে ছবিটি ছিল অন্যের। সেই ছবি পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন কার্যালয়সহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়েও সুরাহা হয়নি। অবশেষে সামছুলের এনআইডি সংশোধন করে হালনাগাদ ছবি বসানো হয়েছে।

আজ বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে তাঁর এনআইডি সংশোধন করা হয়। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সামছুল (৬৪) পাঁচবিবি উপজেলার বীরনগর আটুল মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

সামছুল ২০০৮ সালে এনআইডি হাতে পান। এনআইডিতে নাম-ঠিকানা ঠিক থাকলেও ছবিটি ছিল অন্যজনের। এনআইডির ছবির সঙ্গে নিজের চেহারা মিল না থাকায় বিভিন্ন জায়গায় বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছিলেন তিনি। ছবি পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।

এ নিয়ে ৬ মার্চ প্রথম আলো অনলাইনে ‘নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রে অন্যের ছবি নিয়ে ঘুরছেন সামছুল, পাচ্ছেন না সুরাহা’ শিরোনামে একটি এবং পরদিন প্রথম আলোর ছাপা কাগজে ‘এনআইডিতে অন্যের ছবি নিয়ে ঘুরছেন সামছুল’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সামছুল হকের সংশোধিত এনআইডি ডাটাবেজ

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সামছুলকে নিয়ে প্রথম আলোতে সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর বিষয়টি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নজরে আসে। এরপর সামছুলের এনআইডির বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করে জয়পুরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফজলুল করিমকে প্রতিবেদন দিতে বলেন রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন। গত সোমবার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তদন্ত করে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দেন। আজ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে সামছুলের এনআইডি সংশোধন করা হয়।

এনআইডি সংশোধনের বিষয়টি সামছুলকেও জানানো হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০০৮ সালে যখন এনআইডি হাতে পাই, তখন সেখানে সব ঠিক থাকলেও আমার ছবি ভুল ছিল। আমার ছবির জায়গায় এলাকার এক ব্যক্তির ছবি ছিল। আর ওই ব্যক্তির এনআইডিতে আমার ছবি ছিল। এ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম। ছবি পরিবর্তনের জন্য যে যেভাবে বলেছেন, সেটিই করেছি। ছবি পরিবর্তনের জন্য ২০১৮ সালে আবেদন করেছিলাম। এর পর থেকে নির্বাচন অফিসে ঘুরেছি। কোনো লাভই হয়নি। এর মধ্যে একবার জানতে পারি, এনআইডি অনুযায়ী আমি মারা গেছি।’

সামছুল হক আরও বলেন, পুনরায় আবেদন করলে মৃত থেকে জীবিত করা হয়। কিন্তু ছবি পরিবর্তন হচ্ছিল না। দীর্ঘ এ সময়ে তিনি কোনো নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। জমি কেনা, ব্যাংকঋণ, মুঠোফোনের সিম ওঠানোসহ নানা কাজে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু এনআইডির সমস্যায় পারছিলেন না। প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের পর তাঁর এনআইডি সংশোধন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর এনআইডি সংশোধন হওয়ায় খুব ভালো লাগছে বলে তিনি জানান।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সামছুল হকের এনআইডি সংশোধন করা হয়েছে। এনআইডিতে তাঁর ছবি বসানো হয়েছে।