দুই দিন ধরে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী সব বাস বন্ধ। এতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করা যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। রোববার সকালে
দুই দিন ধরে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী সব বাস বন্ধ। এতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করা যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। রোববার সকালে

বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধে বিপাকে যাত্রীরা

রোববার বেলা ১১টা। ভারত থেকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে পৌঁছান চার যাত্রী। হাতে বড় বড় ব্যাগ ও ট্রলি। নারায়ণগঞ্জে যেতে পরিবহনের কাউন্টারে কাউন্টারে ঘুরছেন। কিন্তু সব কাউন্টারই বন্ধ। ঘণ্টা দেড়েক পর ছোট যানবাহনে যশোর শহরে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের বাস ধরতে হয়েছে তাঁদের। শুধু নারায়ণগঞ্জের এই চার যাত্রী নন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী সব যাত্রীকে দুই দিন ধরে এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

গত শুক্রবার সীমান্তঘেঁষা বাস টার্মিনাল বন্ধ ঘোষণা করে চার কিলোমিটার দূরের পৌর বাস টার্মিনাল চালু করা হয়েছে। টার্মিনাল স্থানান্তরের প্রতিবাদে বেনাপোল ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার সব যাত্রীবাহী পরিবহন বন্ধ ঘোষণা করে ধর্মঘট করছেন পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা। তাঁদের দাবি, যাত্রীদের সুবিধার্থে সীমান্তঘেঁষা টার্মিনালে যাত্রী ওঠানামার সুযোগ দিতে হবে।

আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দরে দেখা গেছে, ভারতফেরত যাত্রীরা ভারী ব্যাগপত্র নিয়ে বন্দরে এসে পরিবহন না পেয়ে বিপাকে পড়ছেন। ইজিবাইকে করে তাঁদের সদ্য চালু হওয়া চার কিলোমিটার দূরে পৌর বাস টার্মিনালে গিয়ে যশোর-বেনাপোল রুটে চলাচল করা লোকাল বাসে উঠতে হচ্ছে। যশোরে গিয়ে তাঁরা দূরপাল্লার বাস ধরছেন।

ভারত থেকে ফেরা নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা রবিউল রনি বলেন, ‘আমরা চারজন মিলে চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে দেখি, দূরপাল্লার কোনো পরিবহন নেই। দেড় ঘণ্টা কাউন্টারে কাউন্টারে ঘুরেছি। কিন্তু সব কাউন্টারই বন্ধ। এখন ভারী ব্যাগ নিয়ে ভেঙে ভেঙে যেতে হবে। কী যে ভোগান্তিতে পড়েছি। এতে খরচও বেড়ে গেছে।’

পৌর বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেল, স্থানীয় বাসগুলো যাত্রীদের টার্মিনালে নামিয়ে দিচ্ছে। এরপর ভারতগামী যাত্রীরা ব্যাগপত্র নিয়ে ইজিবাইক ও ভ্যানে বন্দরে যাচ্ছেন।

বাস থেকে নেমে ভারতীয় এক নারী যাত্রী বলেন, ‘ধর্মীয় কীর্তন গান করার জন্য আমরা ভারত থেকে প্রায়ই বাংলাদেশে আসি। আগে বাস থেকে বন্দরের আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে নামিয়ে দিত। এখন দূরে এখানে নামিয়ে দিচ্ছে। ভারী ব্যাগ নিয়ে চলাচল করা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

পরিবহন বন্ধের কারণ জানতে চাইলে গ্রিন লাইন পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর একটি আন্তর্জাতিক রুট। যাত্রীদের চার কিলোমিটার দূরে নামিয়ে দেওয়া অযৌক্তিক। কারণ, ভারতগামী যাত্রীদের কাছে টাকাপয়সা, পাসপোর্ট ও দামি জিনিসপত্র থাকে। ইজিবাইক-ভ্যানে বন্দরে যাতায়াতের পথে যদি কোনো অঘটন ঘটে, তখন দায়িত্ব কে নেবে? যাত্রীরা তো তাঁদের ধরবে। এ জন্য তাঁরা বন্দরে আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে যাত্রী ওঠানামার সুযোগ চান।

স্থলবন্দর থেকে চার কিলোমিটার দূরে বাস টার্মিনাল। বাধ্য হয়ে যাত্রীদের ছোট যানবাহনে টার্মিনাল বা স্থলবন্দরে যেতে হচ্ছে। রোববার সকালে

জানতে চাইলে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী নাজিব হাসান বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়টি নিরসনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পরিবহনমালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক চলছে। এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন।

বিকেলে জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পরিবহন মালিকদের প্রতিনিধিদল এসেছিলেন। কিন্তু বেনাপোলে দূরপাল্লার পরিবহন সমস্যার সমাধান তাঁর কাছে নেই। নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের নির্দেশে সীমান্তে দূরপাল্লার পরিবহন প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সরাসরি ভারতে যাওয়া তিনটি পরিবহন বন্দরে ঢোকার অনুমতি আছে। অন্যগুলো পৌর বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রী ওঠানামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কী কারণে এমন নির্দেশনা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সেটা ঠিক বলতে পারব না। তবে যানজট, যাত্রী নিরাপত্তা বা অন্য কোনো কারণে তিনি এ নির্দেশনা দিতে পারেন।’

বেনাপোল ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে গেছেন ১ হাজার ১৫৫ জন ও ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন ২ হাজার ৩৩ জন। এখন প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করছেন। তিন মাস আগে সেটি ৮ থেকে ১০ হাজার ছিল। এসব যাত্রী পরিবহনে প্রতিদিন অন্তত ১০০টি দূরপাল্লার বাস চলাচল করে।