উভয় পক্ষ সভা ও সমাবেশ ডেকে পরস্পরকে গালিগালাজ করে যাচ্ছে। ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে।
‘আপনাদের মুখ থেকে এসব শুনতে চাইনি, আশাও করিনি। আপনারা যদি এমনভাবে গালিগালাজ করেন, তাহলে আমরা আপনাদের কাছ থেকে কী শিখব।’ এটি একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর নিচে লেখা একজনের মন্তব্য। ওই ভিডিওতে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক পক্ষের নেতারা আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে গালি দিচ্ছেন। এ রকম দুই পক্ষের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চার মাস ধরে গালিগালাজ চলছে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে। উভয় পক্ষ সভা ও সমাবেশ ডেকে পরস্পরকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব গালিগালাজের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এক পক্ষে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুল হক এবং অপর পক্ষে রয়েছেন সংসদ সদস্যের বিরোধী তৃণমূল আওয়ামী লীগের ব্যানারে ‘ফোর স্টার গ্রুপ’। এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আওয়ামী লীগের উপকমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক পি এম সফিকুল ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকিরুল ইসলাম। তাঁরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁরা সংসদ সদস্য এনামুল হককে বাদ দিয়ে যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে সভা-সমাবেশ করে আসছেন।
দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১ জুলাই উপজেলা পরিষদের ডাকবাংলো চত্বরে সংসদ সদস্যের বিরোধীরা তৃণমূল আওয়ামী লীগের ব্যানারে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। একই দিনে ৫০ গজ দূরে শহীদ মিনার চত্বরে সংসদ সদস্যের অনুসারীরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ব্যানারে আরেকটি ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠান দুটি থেকে পরস্পরকে গালিগালাজসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে ধরা হয়। যদিও এই অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য এনামুল হক উপস্থিত ছিলেন না। এরপর নরদাশ ইউনিয়নে সরকারি ভাতার সুবিধাভোগীদের নিয়ে এক সভায় সংসদ সদস্য এনামুল হক তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা ইব্রাহিম হোসেনকে ইঙ্গিত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন।
এদিকে চলতি বছরের ১৫ আগস্ট সংসদ সদস্যের অনুসারীরা উপজেলার হাটগাঙ্গোপাড়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে শোকসভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য এনামুল হক। তিনি ওই সভায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা ইব্রাহিম হোসেনকে ইঙ্গিত করে তাঁর বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরেন। এখানে তৃণমূল নেতাদের গায়েব করারও হুমকি দেন সংসদ সদস্য। এর ছয় দিন পরেই ২২ আগস্ট একই স্থানে আরেকটি সভার আয়োজন করে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। সভায় ফোর স্টার গ্রুপের চার সদস্য ছাড়াও তাঁদের অনুসারী কয়েক হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ারকে তুলাধোনা করা হয়। অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ছাড়াও আপত্তিকর কথাবার্তা বলা হয়। এরপর উভয় পক্ষ সভা-সমাবেশ ডেকে গালিগালাজ করছে। যেন উভয় পক্ষ গালিগালাজের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
গত কয়েক মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে উভয় পক্ষের নেতাদের। কুরুচিপূর্ণ শব্দের ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সহসভাপতি, কেন্দ্রীয় উপকমিটির পদধারী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
যে ভাষায় গালিগালাজ ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা শোভনীয় নয় বলে মন্তব্য করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। তবে তিনিও প্রতিপক্ষের নেতাদের গালিগালাজ করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাঁরা তো (ফোর স্টার গ্রুপ) প্রথমে শুরু করেছেন। আমি পাল্টা জবাব দিচ্ছি। তবে আমি এখন গালিগালাজ বন্ধ করে দিয়েছি।’
এ সম্পর্কে ফোর স্টার গ্রুপের নেতা রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘শুরুটা সংসদ সদস্য ও তাঁর অনুসারীরা করেছেন। তাঁরা আমাদের তৃণমূল আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতার এলাকায় গিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন। আমরা সমাবেশে ওই সব গালিগালাজ ও অভিযোগের জবাব দিয়েছি। তবে এসব কথাবার্তা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’