ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১২টা বেজে ১৫ মিনিট। ভোটকেন্দ্র তুলনামূলক ফাঁকাই বলা চলে। হঠাৎ এক শিশুর হাত ধরে সেখানে এলেন এক ভোটার। মান্দার শেখ নামের ওই ব্যক্তি শিশুকন্যাকে ভোটকক্ষে নিতে চাইলেও আনসার সদস্যদের বাধার মুখে পড়েন। তবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে বলার পর ভেতরে যাওয়ার অনুমতি পায় শিশুটি। আর সহযোগিতার জন্য সঙ্গে ছিল এক আনসার সদস্য।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার তেলিগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দৃশ্য এটি। সেখানে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসেন দৃষ্টিহীন মান্দার।
২০০২ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি হারান মান্দার। তিনি বলেন, ভ্যান চালানোর সময় কুয়েট রোডে বাসের ধাক্কায় সড়কে পড়ে আহত হয়ে তাঁর এ অবস্থা হয়। তখন থেকেই যেকোনো কাজে তাঁর অন্যের সাহায্য প্রয়োজন হয়। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে নিজের আট বছর বয়সী মেয়ে মালেহা তাবাবসুমকে সঙ্গে এনেছেন তিনি।
আমি জানি, বড় না হলে ভোট দেওয়া যায় না। আজ প্রথম বাবার সঙ্গে ভেতরে ঢুকেছি। আনসার আঙ্কেল ঠিকমতো মার্কায় সিল দিয়েছে। আমি দেখেছি। আমার খুব আনন্দ লেগেছে।আট বছর বয়সী মালেহা তাবাবসুম
ভোট দিয়ে ৬ নম্বর কক্ষ থেকে বের হতেই মালেহার মুখে হাসি দেখা গেল। বোঝাই যাচ্ছে, এই বয়সে ভোটদানের গোপন কক্ষে প্রবেশের সুযোগ পাওয়াটা তার জন্য আনন্দের। মালেহা প্রথম আলোকে জানায়, ‘আমি জানি, বড় না হলে ভোট দেওয়া যায় না। আজ প্রথম বাবার সঙ্গে ভেতরে ঢুকেছি। আনসার আঙ্কেল ঠিকমতো মার্কায় সিল দিয়েছে। আমি দেখেছি। আমার খুব আনন্দ লেগেছে।’
আনন্দিত মান্দার শেখও। ভোট দেওয়াটাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি। মান্দার বলেন, ‘ভোট দেওয়া নাগরিক দায়িত্ব। অবশ্যই ভোট দেওয়া উচিত। ভোট দিতে কেন্দ্রে যাই আমি। আগে স্বজনদের নিয়ে আসতাম। পরে স্ত্রীকে নিয়ে ভোট দিতাম। আজ স্ত্রী আগে ভোট দিয়ে চলে গেছে। আমি মেয়েকে নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকেছি। এরপর আমি মার্কা বলে দিয়েছি; আর এক আনসার সদস্য এতে সিল মেরেছেন। আমার ছোট্ট মেয়ে নিজের চোখে দেখেছে, আমি যা বলছি, আনসার তা মেনে ঠিক মার্কায় ভোট দিয়েছে কি না।’
ভোটের পরিবেশ নিয়ে মান্দার শেখ বলেন, দলীয় প্রতীক না থাকায় মানুষ একটু স্বস্তিতে ভোট দিতে পারছেন। একসময় ছিল, অমুক লোককে অমুক মার্কাতেই দিতে হবে। এখন ওই চাপ নেই। তবে আজ মানুষজন বলাবলি করছেন, এই কেন্দ্রে ভোট নাকি তেমন পড়ছে না।
ওই কেন্দ্রে দেখা গেছে, খুব বেশি ভোটার ভোট দিতে আসছেন না। তেলিগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলা মিলে ভোটারসংখ্যা ৩ হাজার ২৮১। সকাল ১০টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ভোট পড়ে ২৯৬টি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়ে ২০ দশমিক ১৭ শতাংশ।
একই চিত্র দেখা গেছে গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুল কেন্দ্রেও। দীর্ঘ সময় পরপর সেখানে দু–একজন ভোটার আসছিলেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে ভোট পড়ে ১৬ দশমিক ৯১ শতাংশ।
খানাবাড়ি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়ে মাত্র ৯ শতাংশ। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোট শুরুর প্রথম দুই ঘণ্টায় সাড়ে তিন শতাংশের মতো ভোট পড়েছিল। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। তবে ভোটাররা কেন আসছেন না, তা বলতে পারছি না।’