রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় গভীর রাতে পাটবোঝাই একটি ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার খারইল এলাকায় রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে যমুনা জুট মিলের পাশে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নেভান। তবে ট্রাকে থাকা পাটের ১৫-২০ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর থেকে ট্রাকে করে গতকাল রাত ১টার দিকে পাট আসে যমুনা জুট মিলে। মিলের নিরাপত্তারক্ষী খুরশেদ আলমকে ট্রাকচালক সজীব মিয়া চালান দেন। নিরাপত্তারক্ষী খুরশেদ মিলের ইনচার্জকে বিষয়টি জানান। কিন্তু ইনচার্জ মিলের নিয়ম অনুযায়ী, রাত ১১টার পর ট্রাক প্রবেশ করার নিয়ম নেই বলে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। একপর্যায়ে মিলের ফটকের সামনে ট্রাকের মধ্যেই চালক ও তাঁর সহকারী ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আড়াইটার দিকে মহাসড়কে টহল দেওয়া পুলিশ সদস্যেরা দেখতে পান, ট্রাকে আগুন জ্বলছে। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আগুন নেভান। এরপর পাটবোঝাই ট্রাকটি মোহনপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় মিলের ব্যবস্থাপক মোফাজ্জল হোসেন ও ইনচার্জ আজিজ মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে।
মিলের শ্রমিকদলের সর্দার মজিবুর রহমান বলেন, আজ বুধবার সকাল থেকে তাঁরা ট্রাক থেকে পাট নামাচ্ছেন। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলছেন, ওই ট্রাকের মালিকের সঙ্গে কিংবা পাটের মালিকের সঙ্গে কোনো পূর্বশত্রুতা থাকতে পারে। সেই ঘটনার জের ধরে আগুন লাগানো হতে পারে।
মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হরিদাস মণ্ডল বলেন, তাঁরা রাতেই আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। ট্রাকে কোনো ধরনের ভাঙচুর চালানো হয়নি। এ ঘটনায় মিলের দুজনকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। ট্রাক রাতেই মিলের ভেতরে নেওয়া দরকার ছিল। এ ঘটনায় তাঁরা পাটের ক্ষতিপূরণ দেবেন। কোনো পক্ষ বাদী হয়ে মামলা করলে পুলিশ মামলা নেবে।
৬ নভেম্বর মোহনপুর উপজেলার নন্দনহাট এলাকায় রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে ট্রাক থামিয়ে ভাঙচুর করে আগুন লাগায় দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রাকের সামনের অংশ পুড়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ স্থানীয় বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করে। ৮ নভেম্বর অবরোধকারীরা পুঠিয়া উপজেলায় নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কে গাড়ি ভাঙচুর করেন। ২ নভেম্বর রাতে চারঘাটে রেললাইনে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। গত ২৯ অক্টোবর বিএনপির ডাকা হরতাল চলাকালে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আটঘরিয়া এলাকায় এক ট্রাফিক সার্জেন্টের ব্যক্তিগত গাড়ি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
অবরোধে দূরপাল্লার গাড়ি চলছে না
পঞ্চম দফায় বিএনপির ডাকা অবরোধের প্রথম দিনে আজ রাজশাহী থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস চলছে না। তবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কিছু বাস চলাচল করছে। এসব বাসে আজ সকালে বেশ যাত্রী ছিল। এ ছাড়া রাজশাহী থেকে ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে।
রাজশাহীর এ এইচ এম কামারুজ্জামান বাস টার্মিনাল থেকে বাসে করে আজ সকালে চারঘাটে এসেছেন এক যাত্রী। তিনি বলেন, রাজশাহী থেকে চারঘাটে আসতে বাসে ভিড়ের কারণে অর্ধেকের বেশি পথ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। সকালের দিকে সড়কে দু-একটি বাস চলাচল করেছে। এ কারণে যাত্রী বেশি ছিল। তবে নির্ধারিত ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে অবরোধ সমর্থনে রাজশাহী নগরের নওদাপাড়া আমচত্বর হয়ে খড়খড়ি বাইপাস এলাকায় আজ সকাল ৭টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মহানগর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। এতে নেতৃত্ব দেন জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী মহানগরের সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মন্ডল। তবে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের কাউকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি।
মিছিল শেষে জামায়াত নেতা ইমাজ উদ্দিন মন্ডল বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের নির্দেশনায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পাঁয়তারা করছে। দেশে ৯৫ শতাংশ মানুষ এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন চান না। সরকার ক্ষমতার জোরে পুলিশ বাহিনী দিয়ে জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচন করবে, এটা দেশের জনগণ হতে দেবেন না। যদি জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলের আন্দোলন–সংগ্রামকে পাশ কাটিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়, তবে দেশে যে ভয়াবহ সংকট তৈরি হবে, এর জন্য এই সরকারকে এককভাবে দায়ী থাকতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় নির্বাচন আয়োজন এবং জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানসহ সব নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবি করেন তিনি।