এক মাস আগে বাড়ির পাশে নদীর পাড় থেকে ১৩ বছরের ফাইজুর রহমান অপহৃত হয়। অপহরণকারীরা তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বিষয়টি জানানো হয় পুলিশকে। পুলিশ ফাইজুরের পরিবারের সদস্য সেজে টাকা দিতে রাজি হয়। টাকা নিতে এসে ধরা পড়ে অপহরণের সঙ্গে যুক্ত একজন। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যে উদ্ধার হয় ফাইজুর। একে একে গ্রেপ্তার হন দুই নারীসহ আরও পাঁচজন।
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার ঘটনা এটি। ফাইজুর উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নের আবদুল গফুরের ছেলে। গ্রেপ্তারের পর আজ সোমবার ওই ছয়জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন জেলার ছাতক উপজেলার হরিশ্বরণপুর গ্রামের আবদুল্লাহ আল আমিন, জিয়াউর রহমান, আবদুল সালাম, আবদুল সালামের মেয়ে খাদিজা বেগম, জগন্নাথপুর উপজেলার কামারখাল গ্রামের বিল্লাল মিয়া ও বেগম আক্তার।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ফাইজুর গত ২৫ আগস্ট সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের ডাউকা নদীর পাড়ে ছিল। সেখান থেকে একদল লোক তাকে অপহরণ করে নৌকায় করে নিয়ে যায়। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে পাওয়া যায়নি। এরপর ২৭ আগস্ট পরিবারের পক্ষ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। একপর্যায়ে অপহরণকারীরা ফাইজুরকে মারধরের ভিডিও ধারণ করে সেই ফুটেজ পাঠায় পরিবারের কাছে। তার মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা দাবি করা হয়। ফাইজুরের বাবা আবদুল গফুর পরে বিষয়টি পুলিশকে জানান এবং ১২ সেপ্টেম্বর শান্তিগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পুলিশ মাঠে তদন্তে নামে। এর ফাঁকেই মুক্তিপণের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে অপহরণকারীরা। পুলিশ ফাইজুরের পরিবারের সদস্য সেজে অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। দুই পক্ষের আলোচনা অনুযায়ী রোববার রাতে টাকা লেনদেনের সিদ্ধান্ত হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শান্তিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাজল চন্দ্র দেব জানান, সে অনুযায়ী ছাতক উপজেলার একটি ধানখেতে ছদ্মবেশে অবস্থান নেয় পুলিশ। একপর্যায়ে অপহরণের সঙ্গে যুক্ত আবদুল্লাহ আল আমিন টাকা নিতে আসেন। এরপর পুলিশ সেখান থেকে তাঁকে আটক করে। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পরে পুলিশ শান্তিগঞ্জ, ছাতক ও সিলেটে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী চক্রের আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে ছাতকের দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের হরিশ্বরণপুর গ্রাম থেকে আবদুল্লাহ আল আমিনের বাড়ির দোতলার ধানের গোলা থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় ফাইজুরকে উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পর ফাইজুরকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ফাইজুরকে এক মাস ওই ধানের গোলায় বন্দী রাখা হয়েছিল। সেখানেই তাকে খাবার দেওয়া হতো। ফাইজুর দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। আরও কেউ জড়িত থাকলে তাঁদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।