শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন করতে হলে আগে রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিবর্তন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন লেখক-অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। শিক্ষাব্যবস্থার সংকুচিত অবস্থার মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বর্তমান সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো লক্ষণও দেখছেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।
আজ সোমবার বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার রূপরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনারকক্ষে এ সভার আয়োজন করে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন ‘স্ব-চিন্তন’। ‘নতুন বাংলাদেশ ভাবনা’ শিরোনামে এটি সংগঠনটির দ্বিতীয় আয়োজন ছিল।
সভায় সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘রাষ্ট্রব্যবস্থা ও শিক্ষাব্যবস্থার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তন না হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যে পরিবর্তন করা সম্ভব, সেই চিন্তা করতেও আমাদের অনেক দেরি হতো। পরিবর্তন করতে চাইলে আগে রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিবর্তন করতে হবে, তাহলে শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা সম্ভব।’
বর্তমানে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা জেলখানার মতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের সমস্ত শিক্ষাব্যবস্থা ইংরেজিকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। বাংলাদেশের অনেক শিক্ষাবিদের মতে, ‘‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অনেক প্রসার হয়েছে। এখন দরকার গুণগত মান বৃদ্ধি করা, আর গুণগত মান বৃদ্ধির একমাত্র মাধ্যম হলো ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা।’’ কিন্তু বাস্তবিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করতে হলে জাতীয় ভাষায় শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সর্বজনীন নয় উল্লেখ করে সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কেন সর্বজনীন নয়? সর্বজনীন হতে হলে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হতে হবে। তাহলে কেন তা করা হয় না? বর্তমান সরকারের মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থার সংকুচিত অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না।’
দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গণতান্ত্রিকতা নিশ্চিত করা জরুরি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান দুটি সমস্যা হলো, শিক্ষা সর্বজনীন ও আনন্দদায়ক নয়। আমাদের দেশে কেউ আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়তে চাইলে তাকে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয় না। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোতে সেগুলো সম্ভব। এ জন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থা গণতান্ত্রিক ও সমতাভিত্তিক করতে হলে শিক্ষার বিষয় নির্বাচনও গণতান্ত্রিক করতে হবে। তাহলে শিক্ষা আনন্দদায়কের কাছাকাছি যাবে।’