সুন্দরবনের দুবলার চরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী রাসপূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নানে যাতায়াত নিরাপদ করতে দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জন্য পাঁচটি নৌপথ নির্ধারণ করেছে বন বিভাগ। চলতি বছরের ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর তিন দিনব্যাপী এ পূজা অনুষ্ঠিত হবে। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এ সময় সেখানে যেতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে।
বন বিভাগ জানায়, ওই পাঁচটি নৌপথে বন বিভাগের পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। ১৪ নভেম্বর দিনের ভাটায় তাঁদের যাত্রা শুরু করতে হবে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১৬ নভেম্বর সকালে দুবলার চর থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিতে হবে।
বন বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পূজা ও পুণ্যস্নানে আসা তীর্থযাত্রীরা বিভিন্ন নদীপথে লঞ্চ, ট্রলার, স্পিডবোট ও দেশি নৌকা দিয়ে দুবলার চরে যান। এ ক্ষেত্রে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জ দিয়ে যাঁরা যাবেন, তাঁদের বুড়িগোয়ালিনী অথবা কোবাদক থেকে বাটুলানদী-বল নদ-পাট কোষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদ হয়ে দুবলার চরে যেতে হবে। সেই সঙ্গে খুলনা রেঞ্জের কয়রা থেকে কাশিয়াবাদ-খাসিটানা-বজবজা হয়ে আড়ুয়া শিবসা-শিবসা-মরজাত হয়ে চরটিতে যেতে হবে। নলিয়ান স্টেশন থেকে যাঁরা যাবেন, তাঁদের শিবসা-মরজাত নদ হয়ে সেখানে যেতে হবে।
এ ছাড়া পূর্ব বন বিভাগ দুটি নৌপথ নির্ধারণ করেছে। ওই অঞ্চল থেকে যাঁরা যাবেন, তাঁদের ঢাংমারী অথবা চাঁদপাই স্টেশন থেকে-তিন কোনা দ্বীপ হয়ে দুবলার চর এবং বগী-বলেশ্বর-সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলার চর হয়ে দুবলার চরে যেতে হবে।
সুন্দরবনে প্রবেশের সময় এন্ট্রি পয়েন্টে লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকার প্রবেশ ফি, অবস্থান ফি এবং লোকের সংখ্যা অনুযায়ী বিধি মোতাবেক রাজস্ব আদায় করে পাস দেবে বন বিভাগ। অনুমতি পেতে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ তীর্থযাত্রীদের আবেদন করতে হবে। প্রতিটি অনুমতিপত্রে সিল মেরে নৌপথ উল্লেখ্য করা হবে এবং তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীরা পছন্দমতো একটি পথ ব্যবহার করতে পারবেন। বন বিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া কোথাও লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা থামানো যাবে না। ট্রলারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লাইভ জ্যাকেট বা বয়া সংরক্ষণ করার নির্দেশনা দিয়েছে বন বিভাগ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক যেমন প্লাস্টিকের প্লেট, পানির বোতল, গ্লাস বা চামচ বহন করা যাবে না। লঞ্চ, ট্রলার, নৌকায় ও পুণ্যস্নানের জায়গায় মাইক বাজানো, পটকা, বাজি ফোটানোসহ সব ধরনের শব্দদূষণ নিষিদ্ধ। রাসপূর্ণিমায় আসা পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রাপ্ত সনদের মূল কপি সঙ্গে রাখতে হবে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিটি জলযানের গায়ে রং অথবা স্টিকার দিয়ে বিএলসি বা সিরিয়াল নম্বর, তীর্থযাত্রী বা পুণ্যার্থীর সংখ্যা উল্লেখ করা হবে। সুন্দরবনে প্রবেশকালে প্রত্যেক তীর্থযাত্রী বা পুণ্যার্থীকে একটি করে টিকিট বা টোকেন দেওয়া হবে। অবস্থানকালে ওই টোকেন বা টিকিট নিজের সঙ্গে রাখতে হবে। প্রতিটি লঞ্চ, নৌকা ও ট্রলারকে আলোরকোলে স্থাপিত কন্ট্রোলরুমে আবশ্যিকভাবে রিপোর্ট করতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বন বিভাগ। এ ছাড়া কারও কাছে কোনো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য, হরিণ মারার ফাঁদ, দড়ি, গাছ কাটার কুড়াল, করাতসহ অবৈধ কিছু পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।