কর্মিসভা বা উঠান বৈঠকের নামে প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকেরা নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। ফেসবুকেও সরব তাঁরা।
নির্বাচনী আচরণবিধিমালা অনুযায়ী ভোটগ্রহণের নির্ধারিত তিন সপ্তাহ বা প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন না প্রার্থী বা তাঁদের অনুসারীরা। কিন্তু গাজীপুরের সংসদীয় আসনগুলোতে সে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। কোথাও আয়োজন করা হচ্ছে কর্মিসভা, উঠান বৈঠক, কোথাও চলছে গণসংযোগ। অনেকে ভোটের প্রচারের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন ফেসবুক। নানা ছলে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীরা।
গাজীপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসন থেকে এবার মোট প্রার্থী হয়েছেন ৪২ জন। প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রয়েছেন। দলটির স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন দলের ছয়জন নেতা। বাকিরা জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনই বেশি ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে গাজীপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের নজরে যে কয়টা ঘটনা আসছে, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রার্থীদের বিভিন্ন হারে জরিমানা করা হচ্ছে। তা ছাড়া আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করলে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে শোকজ করা হচ্ছে।’
গাজীপুর-২ আসনে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান (রাসেল)। তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা কোথাও কর্মিসভা, উঠান বৈঠক বা ওয়াজ মাহফিলে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে নানা ছলে নৌকার পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। জাহিদ আহসান রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘না জেনে প্রথমে দু–একটা সভায় আমি ভোট চেয়েছিলাম। এ নিয়ে শোকজও খেয়েছি। এখন আর কোথাও ভোট চাই না।’
গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর) আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও প্রয়াত প্রতিমন্ত্রী রহমত আলীর মেয়ে রুমানা আলী। মনোনয়ন পাওয়ার পর তাঁর ভাই জামিল হাসান কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রচারে নামেন। রুমানা আলী নিজেও শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে প্রচার চালান।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ (চুমকি) ও তাঁর কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ৩০ নভেম্বর মেহের আফরোজ ও তাঁর দুই অনুসারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি।
গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিভিন্ন সময় এলাকায় উঠান বৈঠক বা কর্মিসভা করেছেন বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে। ব্যতিক্রম গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী সিমিন হোসেন (রিমি)। তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্য নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙে প্রচারণার খবর পাওয়া যায়নি।
গাজীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিম উদ্দিন ও যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দুজনই আচরণবিধি ভেঙেছেন একাধিকবার। বিভিন্ন জায়গায় কর্মী সমাবেশ ও উঠান বৈঠক করেছেন আলিম উদ্দিন। সর্বশেষ ১১ ডিসেম্বর শহরের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে কয়েক শ মানুষ নিয়ে বড় সমাবেশ করেন আলিম উদ্দিন। সেখানে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমও উপস্থিত ছিলেন। আচরণবিধির বিষয়ে প্রথম আলোকে আলিম উদ্দিন বলেন, তিনি একটি আবদ্ধ জায়গায় উঠান বৈঠক করেছেন। কোনো আচরণবিধি ভঙ্গ করেননি।
গাজীপুর-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন (সবুজ)। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকেই তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি নিজেই বিভিন্ন এলাকায় কর্মিসভা ও উঠান বৈঠক করেছেন। এ বিষয়ে ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমি কোথাও ভোট চাইনি। যত জায়গায় যাচ্ছি, ছোট ছোট কর্মিসভা, উঠান বৈঠক করেছি। এটা আচরণবিধির মধ্যে পড়ে না।’
গাজীপুর-১ আসন থেকে নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। তিনিও কালিয়াকৈরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মিসভা করেছেন। যদিও তাঁর দাবি, তিনি আচরণবিধি ভাঙেননি।
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে গাজীপুর-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো.আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধেও। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল ও শোডাউনের অভিযোগে গত ১০ ডিসেম্বর আখতারুজ্জামানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।
আওয়ামী লীগের ও স্বতন্ত্র বেশির ভাগ প্রার্থী ফেসবুকে সরব। তাঁদের পোস্টগুলোতে অনুসারীরা বিভিন্ন ধরনের কমেন্ট করার পাশাপাশি শেয়ার করছেন, চাচ্ছেন ভোট। জাহিদ আহসান, কাজী আলিম উদ্দিনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভোটের প্রচার নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট দেখা যায়। গাজীপুর-১ আসনে এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নামে কোনো পেজ বা অ্যাকাউন্ট না থাকলেও কর্মীরা ফেসবুকে প্রচার চালাচ্ছেন। আরও অনেক প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারের জন্য ফেসবুককে বেছে নিয়েছেন।
বিষয়টি নজরে আনা হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ফেসবুকটা তাঁরা নজরদারিতে নিয়ে এসেছেন।