আপত্তিকর বক্তব্যে ইউএনওকে বিদায় করার হুমকি উপজেলা চেয়ারম্যানের

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাব্বুল হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে তাবাসসুমকে বিদায় করার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাব্বুল হোসেন।

গতকাল সোমবার বিকেলে স্থানীয় যুবলীগ আয়োজিত ‘শান্তি সমাবেশে’ দেওয়া বক্তব্যে তিনি আপত্তিকর শব্দে ইউএনওকে ঈদের পর বিদায় করে দেওয়ার কথা জানান। এ সময় ইউএনওর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন তিনি। ইতিমধ্যে ওই বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে রাব্বুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ইউএনওর নানা অনিয়ম-দুর্নীতি এবং তাঁকে (রাব্বুল) হেয় করার প্রতিবাদ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বক্তব্যে। অশালীন শব্দ প্রয়োগের অভিযোগ সঠিক নয়। ওই বক্তব্যের মাধ্যমে ইউএনওর শালীনতা ক্ষুণ্ন করা হয়নি। কেউ সম্পাদনা করে বক্তব্যটি ছড়িয়েছে। জেলা প্রশাসককে মৌখিকভাবে একাধিকবার ইউএনওর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ক্ষোভ থেকে তাঁকে অপসারণের জন্য বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।

রাব্বুল হোসেন অভিযোগ করেন, ‘আমার গাড়িচালকসহ তিন কর্মচারীর বেতনসহ টিএ, ডিএ বিল আটকে রেখেছেন ইউএনও। গত রোজার ঈদেও বিলে স্বাক্ষর করেননি। এলাকার রাজমিস্ত্রিকে প্রশিক্ষণের সরকারি বরাদ্দের ১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ফেরত চলে গেছে। টিআর-কাবিখার তালিকায় সচ্ছল ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তাঁরা কোনো প্রকল্প দিলে সেটি গ্রহণ করা হয় না। নিজের ইচ্ছেমতো প্রকল্প নেন। ইউএনওর বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ এবং সংবাদ সম্মেলন করেও কোনো প্রতিকার পাননি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। এতে আমরা জনগণের কাছে হেয় হচ্ছি।’

স্থানীয় যুবলীগ আয়োজিত ‘শান্তি সমাবেশে’ দেওয়া বক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যান আপত্তিকর শব্দে ইউএনওকে ঈদের পর বিদায় করে দেওয়ার হুমকি দেন

অভিযোগ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে ইউএনও উম্মে তাবাসসুমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। বিষয়বস্তু জানিয়ে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান প্রথম আলোকে বলেন, ভোলাহাটের ইউএনওর উদ্দেশে অশালীন বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। একজন নারী কর্মকর্তার প্রতি এমন বক্তব্য অশালীন। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ইউএনওর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ইউএনওকে আইন মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইনসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার কারণেও কেউ ক্ষুব্ধ হতে পারেন।

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনের সংসদ সদস্য মু. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে অনেকেই আমাকে ফোন করেছেন। একজন নারী কর্মকর্তার উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে শালীনতার মাত্রা অতিক্রম করা উচিত নয়। মানুষ সেটা ভালোভাবে গ্রহণ করবে না। বিষয়টি জানতে রাব্বুল হোসেনকে ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি ধরেননি।’