কক্সবাজারের পেকুয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পরিবারের ১০ সদস্যকে নিয়ে কাফনের কাপড় পড়ে অনশন করছেন এক উন্নয়ন কর্মী । আজ দুপুর একটার দিকে
কক্সবাজারের পেকুয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পরিবারের ১০ সদস্যকে নিয়ে কাফনের কাপড় পড়ে অনশন করছেন এক উন্নয়ন কর্মী । আজ দুপুর একটার দিকে

বারবার হামলার শিকার হলেও বিচার পাননি, পরিবার নিয়ে শহীদ মিনারে অনশন উন্নয়নকর্মীর

কক্সবাজারের পেকুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজের মাঠে অবস্থিত শহীদ মিনারে পরিবারের ১০ সদস্যকে নিয়ে অনশন করছেন নাজিম উদ্দিন নামের এক উন্নয়নকর্মী। আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে অনশনে বসেন ওই উন্নয়নকর্মী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দ্বারা বারবার বসতবাড়িতে হামলার প্রতিবাদে তাঁরা অনশন করছেন বলে জানা যায়। আজ বিকেলেও তাঁদের অনশন চলছিল।

নাজিম উদ্দিন একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় টেকনাফ অঞ্চলে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রশিদ ও বারবাকিয়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন আমাদের বসতবাড়ি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। গত ১৭ বছর আমরা নিজের বসতভিটায় থেকেছি ভয়ে ভয়ে। পরিবারের ২১ সদস্য নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছি। এখন আরও বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বসতঘরে তিনবার গুলিবর্ষণ এবং লুটপাট করেছে তারা। গুলিবর্ষণের ছবিসহ থানায় এজাহার দেওয়া হলেও পেকুয়া থানার তৎকালীন ওসি মোহাম্মদ ইলিয়াছ আমাদের মামলা নেননি। আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখিয়ে তাঁরা উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে। আমার পক্ষে আদালতের আদেশ, বৈধ খতিয়ান—সবই আছে। নেই শুধু পেশিশক্তি।’

কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৩ সাল থেকে পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের জালিয়াকাটা এলাকায় নাজিম উদ্দিনের পরিবারের বসতবাড়ির ১ একর ২০ শতক জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বারেক ও তাঁর সহযোগীরা। দফায় দফায় বাড়িতে হামলা করেন তাঁরা। ওই ঘটনায় নাজিমের পরিবার দুটো মামলা করেন। বর্তমানে মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন। ২০১৮ সালে আদালত বারেক ও তাঁর লোকজনের নাজিমদের বসতবাড়িতে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এরপরও তাঁদের হামলা চলতে থাকে। সর্বশেষ গত ১১ আগস্ট নাজিমদের বসতবাড়িতে ঢুকে লুটপাট ও গুলিবর্ষণ করা হয়। গুলিবর্ষণের ছবি ও ভিডিও নিয়ে থানায় এজাহার জমা দিলেও মামরা না নিয়ে উল্টো ভুক্তভোগী পরিবারের নামে মামলা করা হয়।

নাজিমের বোন উম্মে কুলসুম চাকরি করেন একটি দেশীয় উন্নয়ন সংস্থায়। তিনি বলেন, ‘জায়গাজমির মালিক আমার বাবা। প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আমাদের অনেক হয়রানি করেছে। পাঁচ বছর ধরে আদালতের নিষেধাজ্ঞাও তারা মানে না। বর্তমানেও মানছে না। নিজের জায়গাজমি বুঝে না পেয়ে আক্ষেপ করতে করতে আমাদের বাবা মারা গেছেন। সব সময় শঙ্কায় জীবন কাটে। বারেক, মামুন ও আমিনুর রশিদ কথায় কথায় অস্ত্র নিয়ে বের হয়ে পড়ে। প্রমাণ থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

জীবনশঙ্কায় নিরুপায় হয়ে শহীদ মিনারে অনশন করছেন বলে জানান নাজিম ও তাঁর পরিবার। কোনো প্রতিকার না পেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিষপান করে আত্মহত্যা করবেন বলে জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বারেকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। দেখি, কী করা যায়।’