এবার কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক খুলে রেকর্ড ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা পাওয়া গেছে। শনিবার রাত ৯টায় গণনা শেষ হলে এ টাকা পাওয়া যায়। এ ছাড়া দানসিন্দুকে মিলেছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার।
চার মাসের মাথায় আজ সকাল আটটায় দানসিন্দুকগুলো খুলে ১৯ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা গণনা চলে বলে জানিয়েছেন মসজিদ কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।
এর আগে গত ৭ জানুয়ারি পাগলা মসজিদের ৮টি দানসিন্দুকে ১৬ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। সেবার দিনভর গুনে পাওয়া গিয়েছিল ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকাসহ বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা, রুপা।
জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরের ঐতিহাসিক মসজিদটিতে লোহার আটটি দানসিন্দুক রয়েছে। তিন মাস পরপর এসব সিন্দুক খোলার কথা। তবে পবিত্র রমজান মাস ও ঈদের কারণে এবার খোলা হয়েছে চার মাসের মাথায়।
মধ্যে রমজান মাস ও ঈদুল ফিতর থাকায় এবার এত টাকা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানসিন্দুক খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজ এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে শনিবার সকাল আটটায় সিন্দুকগুলো খোলা হয়। প্রথমে টাকাগুলো সিন্দুক থেকে বস্তায় ভরা হয়। পরে মেঝেতে ঢেলে গণনা শুরু করা হয়। মাদ্রাসার শতাধিক খুদে শিক্ষার্থী, ব্যাংকের অর্ধশত কর্মী, মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মিলিয়ে দুই শতাধিক লোক টাকা গণনায় অংশ নেন।
এ সময় শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া ছাড়াও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলাম, শেখ জাবের আহমেদ ও সাদিয়া আফরিন, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মসজিদটি গড়ে ওঠে। কথিত আছে, খাসনিয়তে এ মসজিদে দান করলে মানুষের মনের আশা পূরণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে দান করে থাকেন। মানুষ টাকাপয়সা ছাড়াও স্বর্ণালংকার দান করেন। এ ছাড়া গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসও মসজিদটিতে দান করা হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তাও করা হয়। এ ছাড়া মসজিদের জমানো টাকা দিয়ে এখানে মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অর্ধলক্ষ মুসল্লি যাতে একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন, এ রকম আকর্ষণীয় একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে ১২০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে।