সুনামগঞ্জে প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ পেয়ে খুশি বন্যার্ত আবদুশ শহীদ। মঙ্গলবার দুপুরে দোয়ারাবাজার উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকায়
সুনামগঞ্জে প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ পেয়ে খুশি বন্যার্ত আবদুশ শহীদ। মঙ্গলবার দুপুরে দোয়ারাবাজার উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকায়

‘আজকু পয়লা খানি পাইলাম, মনটা ভরি গেছে’

সুনামগঞ্জে বন্যার্ত আরও ১০০টি পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দিয়েছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও এলাকায় প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা এই ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

মান্নারগাঁও ইউনিয়নের চণ্ডীপুর, উলুকান্দি, নোয়াগাঁও, লামাগাঁও, ইদনপুর, কামারগাঁও, ডুলপশি ও কাঠাখালী গ্রামের বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের হাতে ত্রাণসহায়তা তুলে দেন বন্ধুসভার সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। প্রতিটি পরিবারের জন্য ত্রাণসামগ্রী হিসেবে পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি করে ডাল, পেঁয়াজ, আলু, লবণ; আধা লিটার সয়াবিন তেল, দুটি খাওয়ার স্যালাইন, একটি সাবান ও একটি গ্যাসলাইট ছিল।

খাদ্যসামগ্রী পেয়ে খুশি হন লামাগাঁও গ্রামের আবদুশ শহীদ (৭০)। খাদ্যসামগ্রীর বস্তা মাথায় নিয়ে বলেন, ‘একমাত্র ছেলে পঙ্গু। আমিও কাম করতাম পারি না। ঘরোও পাঁচজন মানুষ। বন্যাত ঘরের ক্ষতি অইছে। এখন কিলা ঘর ঠিক করতাম আর কিলা খাইতাম, ওউ চিন্তাত আছি। আজকু যে খানি দিলা, বড় উপকার অইব।’

সাত বছরের নাতি ইয়াসিনকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন চণ্ডীপুর গ্রামের আফলাতুন বেগম (৬০)। তাঁদের ঘরে পাঁচ দিন বন্যার পানি ছিল। আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। এখন পানি নামায় গত রোববার ঘরে ফিরেছেন। আফলাতুন বেগম বললেন, ‘কত বড় বন্যা গেল, মানুষের থাকন-খাওনের কষ্টত আছে। কেউ ত কুনতা লইয়া আইলা না। আজকু পয়লা তোমার খানি পাইলাম। মনটা ভরি গেছে।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া ত্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন সুনামগঞ্জে বন্যায় বিপাকে পড়া লোকজন। মঙ্গলবার দুপুরে দোয়ারাবাজার উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকায়

দুপুরে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছানোর আগেই বন্যার্ত মানুষ এসে জড়ো হন। এরপর জেলা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের নোয়াগাঁওয়ে পৌঁছান বন্ধুসভার সদস্যরা। প্রথম আলো পত্রিকার পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণের বিষয়টি শুনে অনেকেই সহযোগিতা করেন। পরে স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে বন্যার্তদের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন বন্ধুসভার সদস্যরা। হাওরপারের এই দুর্গম গ্রামগুলোতে বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ায় প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

খাদ্যসামগ্রী বিতরণকালে স্থানীয় সমাজকর্মী আবু হেনা আজিজ, আবদুল মতিন ও মো. আজর আলী, সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা মোহাম্মদ রাজু আহমেদ, বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি প্রদীপ পাল, বর্তমান সভাপতি সৌরভ সরকার, সুনামগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক খলিল রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গতকাল সোমবার প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে সদর উপজেলার দেখার হাওরপারের দুটি গ্রামের ১০০টি বন্যার্ত পরিবারকে একইভাবে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। ১৬ জুন থেকে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। তলিয়ে যায় অসংখ্য বাড়িঘর রাস্তাঘাট। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে।

বন্যায় জেলার ১২টি উপজেলায় ১ হাজার ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানিবন্দী হয়ে পড়েন প্রায় ৮ লাখ মানুষ। ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয় প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। পানি নামায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িঘরে ফিরছেন।

সুনামগঞ্জে বন্যার্তদের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ। মঙ্গলবার দুপুরে দোয়ারাবাজার উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকায়

উল্লেখ্য, প্রথম আলো ট্রাস্টের এই আয়োজনে সহযোগিতা করছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসি। বন্যার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টে পাঁচ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই অনুদানের টাকায় বন্যার্ত মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল। হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশান অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।