ঢাকার কেরানীগঞ্জে নবকলি পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় সড়কের পাশে রাখা হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত তিনজনের মধ্যে একজনের পরিচয় এখনো মেলেনি।
বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তিরা হলেন ঘরোয়া হোটেলের কর্মচারী পটুয়াখালীর বাউফল থানার বেলায়েত চকিদারের ছেলে ইলিয়াস হোসেন (২২), হোটেলের পার্শ্ববর্তী ওয়ার্কশপের কর্মচারী পিরোজপুর সদর থানা এলাকার মৃত আলী আকবরের ছেলে আকরাম হোসেন (৪৫) ও অজ্ঞাতনামা যুবক (২৮)। অজ্ঞাত ওই যুবকের লাশ পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হলেন মোহাম্মদ মিন্টু (৫৫) ও মো. হাসেম (৩০)।
আজ রোববার দুপুরে নিহত ইলিয়াসের ভগ্নিপতি সোহেল রানা বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ওই মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত কয়েকজন ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত মায়েল বিরিয়ানি হোটেলের কর্মচারী জাহিদ মিয়া বলেন, ‘গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে আমরা কাজ করছিলাম। এ সময় উত্তর দিক থেকে আসা নবাবগঞ্জগামী নবকলি পরিবহনের একটি বাস সড়কের পাশে হোটেলের সামনে পার্কিং করে রাখা একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যানকে ধাক্কা দেয়। এ সময় ভ্যানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘরোয়া হোটেলের জ্বলন্ত চুলার পাশে রাখা গ্যাস সিলিন্ডারে লাগলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মুহূর্তেই দোকানে আগুন ধরে যায়। এ সময় লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। তখন আমরাও দৌড়ে বাইরে চলে যাই। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নেভান। এরপর হোটেলের ভেতর থেকে তিনজনের পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়।’
মামলার বাদী সোহেল রানা বলেন, ‘গত ১৬ সেপ্টেম্বর শ্যালক ইলিয়াস ঘরোয়া হোটেলে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। গতকাল মধ্যরাতে এক ব্যক্তি কল দিয়ে জানান, ইলিয়াস অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তাঁর লাশ হাসপাতালে আছে। এরপর আমরা হাসপাতালে গিয়ে শ্যালকের লাশ দেখতে পাই। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছি। যাঁদের কারণে আগুনে পুড়ে আমার শ্যালকের মৃত্যু হয়েছে, আমরা তাঁদের বিচার চাই।’
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম জানান, কেরানীগঞ্জে হোটেলে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদ মিন্টুর (৫৫) শরীরের ৫২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তিনি চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া হাসেম নামের আরও একজনের শরীরের ৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাঁকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা কাজল মিয়া বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় ঘরোয়া হোটেল, মায়ের দোয়া হার্ডওয়্যার, শাহ আলম ভ্যারাইটিজ স্টোর ও মায়েল বিরিয়ানি নামক চারটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এ চারটি দোকানের প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাসের ধাক্কায় ভ্যান গাড়ি হোটেলের চুলার ওপর পড়ে আগুন ধরে যায়।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মুফতী সোহেল বলেন, হোটেলে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। কী কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে আজ বিকেলে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ঢাকা উত্তর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান। তিনি বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অকালে তিনটি প্রাণ ঝরে গেল। ডিসি ও ইউএনও মহোদয়কে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে। সড়কের পাশে গ্যাস সিলিন্ডার রাখার কারণে এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। কোনো অবস্থাতেই গ্যাস সিলিন্ডার সড়কের পাশে রাখা যাবে না। এ ছাড়া সড়কে যানজট সৃষ্টি হতে দেওয়া যাবে না। এ জন্য সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আমাদের নেতা তারেক জিয়া ১৬ বছর ধরে আন্দোলন–সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন। পরে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে আমরা বিজয় পেয়েছি। এ বিজয় আমাদের ধরে রাখতে হবে।
কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া, হযরতপুর ও রোহিতপুর বাজারের খাজনা মওকুফ করা হয়েছে। চাঁদাবাজ ও মাদকের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে।’