আজ শুক্রবার বড়চওনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উভয় পক্ষ একই সময়ে কর্মী সমাবেশ ডেকেছে। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. জোয়াহেরুল ইসলামের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব বাড়ছে। দুই পক্ষের অনুসারীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। ইউনিয়ন পর্যায়েও দুই পক্ষ কর্মী সমাবেশ করে পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা করছে। আজ শুক্রবার বড়চওনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দুই পক্ষই কর্মী সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।
বর্তমান কমিটির কোষাধ্যক্ষ মুহম্মদ আবদুল আলীম বলেন, আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ এভাবে ঝগড়া করলে বিরোধী দল লাভবান হবে। এ ক্ষেত্রে দুই পক্ষেরই ছাড় দেওয়ার মন-মানসিকতা থাকতে হবে।
দলীয় কর্মীরা বলেন, ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শওকত সিকদারকে সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহানকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু তাঁরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি।
পাঁচ মাস আগে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকে টাঙ্গাইল-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ঝামেলার শুরু হয়। এর মধ্যে গত রোববার রাতে ৭১ সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ও জোয়াহেরুল ইসলাম। এরপর তাঁদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে।
দলীয় সূত্র জানায়, রাতেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সমন্বয় না করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটির সংশোধনের দাবিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ গত সোমবার বিকেলে পৌর শহরের মুক্তার ফোয়ারা চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকেন। এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুসারীরা সরকারি সাদত কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আলীম মাহমুদকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে একই স্থানে সমাবেশ ডাকেন। ওই দিন শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে দুই পক্ষই তাদের কর্মসূচি তুলে নেয়।
৭১ সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেওয়া নিয়ে তাঁদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে।
পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা কমিটি সংশোধনের জন্য সংসদ সদস্যকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনুপম শাহজাহান বলেন, ‘আমরা যে কমিটি জমা দিয়েছি, সেই কমিটি থেকে ২৩ জনকে বাদ দিয়ে সংসদ সদস্য তাঁর ইচ্ছেমতো পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বিতর্কিতদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সংসদ সদস্য নিজেই এই অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির নায়ক।’
এর মধ্যে গত রোববার রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নবগঠিত হতেয়া-রাজাবাড়ী ইউনিয়নে ৩১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে জোয়াহেরুল ইসলাম ও তাঁর অনুসারীরা পরদিন পাল্টা একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। আজ শুক্রবার নবগঠিত বড়চওনার ইউনিয়নের বড়চওনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উভয় পক্ষই একই সময়ে কর্মী সমাবেশ ডেকেছে। এ নিয়ে ওই ইউনিয়নে দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
বড়চওনার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও উপজেলা প্রশাসন কোনো উদ্যোগ না নিলে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, দুই পক্ষ একই স্থানে কর্মী সমাবেশ ডাকার বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার যাতে অবনতি না হয়, এ জন্য ওই স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত শিকদার বলেন, শুক্রবার বড়চওনা ইউনিয়নের ওই মাঠে আওয়ামী লীগের কর্মী সভা করার জন্য তাঁরা আগে অনুমতি নিয়েছেন। ইউনিয়নের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যের কোনো ক্ষমতা নেই। তিনিই সব ঝগড়া বাধাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে জোয়াহেরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে একাধিকবার এ বিষয়ে কথা হয়েছে। সর্বশেষ তাঁরা যে কমিটি জেলায় পাঠিয়েছিলেন, ওই কমিটিতে উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের আত্মীয়স্বজন ও বিতর্কিতদের নাম ছিল। অনুমোদিত কমিটিতে শুধু বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষিত ও ত্যাগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি শুধু সংসদ সদস্যই নন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। তাঁরা তাঁকে বিষোদ্গার করে বক্তব্য দিচ্ছেন, যা দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী।