যুবলীগ নেতাদের ওপর হামলা

সংসদ সদস্য রাগেবুল ও তাঁর কর্মীদের নামে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ

বগুড়া জেলা যুবলীগের উপপ্রচার সম্পাদক জিয়াদুশ শরীফের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শহর শাখা যুবলীগের মানববন্ধন। গত সোমবার বিকেলে বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ায় পুলিশ ফাঁড়িতে আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসানের সঙ্গে আসা নেতা-কর্মীদের হামলার শিকার যুবলীগ নেতার মামলা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে থানা-পুলিশের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী নেতার ভাষ্য, হাসপাতালে দুই দিন চিকিৎসা শেষে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। এরপর মামলা করতে থানায় গেলে তাঁকে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।

হামলার শিকার যুবলীগ নেতার নাম জিয়াদুশ শরীফ (পরাগ)। তিনি বগুড়া জেলা যুবলীগের উপপ্রচার সম্পাদক। রাগেবুল আহসান বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

গত রোববার রাত ১২টার দিকে বগুড়া সদর ফাঁড়িতে পুলিশের সামনেই সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসানের সঙ্গে আসা ৪০-৫০ জন জিয়াদুশ শরীফ এবং জেলা যুবলীগের সদস্য শিহাব উল আলমের (আদনান) ওপর হামলা করেন। লাঠি ও পাইপ দিয়ে দুজনকে বেধড়ক পেটানো হয়। হামলায় আহত জিয়াদুশ শরীফকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে শহরের সাতমাথায় শহর যুবলীগের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

জিয়াদুশের অভিযোগ, দুই দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর কিছুটা সুস্থ বোধ করছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফেরেন। এদিন রাতেই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে তিনি সদর থানায় যান। অভিযোগ নিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে দেখা করতে চাইলে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা (ডিউটি অফিসার) বলেন, ‘ওসি স্যার থানার বাইরে আছেন। ওসি স্যারের সঙ্গে কথা না বলে অভিযোগ গ্রহণ করা যাবে না। ওসি স্যারের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে কাল (বুধবার) আসেন।’

মামলা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে মঙ্গলবার রাতে সেখানে ছিলেন। সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দিতে কেউ থানায় এসেছেন, এমনটা তাঁর জানা নেই।

যুবলীগ নেতা জিয়াদুশ শরীফ জানান, অভিযোগে হামলাকারীদের নাম–পরিচয় ছাড়াও সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসানকে নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ, হামলাকারীরা সংসদ সদস্যের সঙ্গে ফাঁড়িতে ঢুকেই অনেক মানুষের সামনে অতর্কিত হামলা চালিয়েছেন। এ হামলায় সংসদ সদস্যের প্রত্যক্ষ মদদ আছে। হামলাকারীরা সংসদ সদস্য ও তাঁর ছেলের বন্ধু বলে দাবি ওই যুবলীগ নেতার।

জিয়াদুশ বলেন, ‘হামলার পর সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান তাঁর ছেলেসহ হামলাকারীদের সঙ্গে নিয়ে তামিল সিনেমার ভিলেনের মতো বীরদর্পে ফাঁড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তাঁর পক্ষে নৌকাকে জেতাতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আমার মহল্লায় ঢুকতে দিইনি। অথচ বিজয়ী হওয়ার পর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের চেনেন না। উল্টো কোনো অপরাধ ছাড়াই সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ফাঁড়িতে ঢুকে পুলিশের সামনেই আমাদের ওপর হামলা করেছেন। হাসপাতালে ভর্তির পর সংসদ সদস্যকে ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।’

প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় লোকজন ও আহত যুবলীগ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার রাত ১১টার দিকে শহরের সাতমাথায় জিলা স্কুলের ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাজাহানপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। এ সময় সাতমাথা থেকে বেপরোয়া গতিতে উল্টো পথ দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে পুলিশ প্লাজার দিকে যাচ্ছিলেন আবীর নামের এক তরুণ। তিনি জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পীরব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসিফ মাহমুদের ছেলে এবং সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসানের ছেলে প্রতীত আহসানের বন্ধু।

আবীরের মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুলের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। রাকিবুল একপর্যায়ে মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নেন। তিনি বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে ‘মদ্যপ’ বলে মন্তব্য করেন এবং আবীরের ওপর চড়াও হন। এ সময় যুবলীগের দুই নেতা জিয়াদুশ ও শিহাব ছাত্রলীগ নেতার পক্ষ নিয়ে আবীরকে গালমন্দ করেন। এতে আবীর ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর বন্ধুদের ফোন দেন।

এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসানের ছেলে প্রতীত আহসানের নেতৃত্বে ৩৫-৪০ জন সাতমাথায় উপস্থিত হয়ে রাকিবুলের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। সেখানে সদর ফাঁড়ি পুলিশের কয়েকজন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ দুই পক্ষকে সদর ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। পুলিশের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটমাট হওয়ার পথে এগোচ্ছিল, কিন্তু রাত ১২টার দিকে সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান ছেলের পক্ষ নিয়ে ফাঁড়িতে আসেন। পুরো বিষয়টি খুলে বলতে সেখানে যুবলীগ নেতা জিয়াদুশ শরীফ এগিয়ে গেলে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালান সংসদ সদস্যের সঙ্গে ফাঁড়িতে আসা ব্যক্তিরা। তাঁরা শিহাবের ওপরও চড়াও হন। পরে রাগেবুল আহসান ছেলে ও হামলাকারীদের সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

পুলিশ হামলাকারীদের আটক না করে যুবলীগের দুই নেতা ছাড়াও ছাত্রলীগ নেতাকে ফাঁড়িতে আটক রাখেন। পরে একজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার রাত তিনটার দিকে ফাঁড়িতে গিয়ে মুচলেকা দিয়ে আটক নেতাদের থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন। এ বিষয়ে সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। যা ঘটেছে, আমার অজ্ঞাতসারে ঘটেছে।’