ফরিদপুরের চরভদ্রাসন

দোকান উচ্ছেদ নিয়ে কাজী জাফর উল্যাহ ও সংসদ সদস্য নিক্সন পাল্টাপাল্টি অবস্থানে

গত ২৬ জুলাই ১৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও থেকে যায় আওয়ামী লীগের অফিস। ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের চর হাজিগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে
প্রথম আলো

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে একটি বিদ্যালয়ের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ ও ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছেন।

চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিলা কবির গত ২৬ জুলাই অভিযান চালিয়ে হাজিগঞ্জ বাজারসংলগ্ন চর হাজিগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অবস্থিত ১৪টি অবৈধ দোকানঘর উচ্ছেদ করেন। এর মধ্যে কাজী জাফর উল্যাহর অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আহসানুল হকের টিনশেড একটি পাকা ঘরও ছিল। তবে ওই অভিযানে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গাজিরটেক ইউনিয়ন কার্যালয়’ নামে একটি টিনের ঘর অপসারণ করা হয়নি। ২৭ জুলাই উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় ওই স্থানের অবশিষ্ট অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেন ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী। তিনি সম্মানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরিয়ে নিয়ে ওই অবৈধ স্থাপনা তিন দিনের মধ্যে উচ্ছেদ করতে বলেন। তবে সংসদ সদস্যের ওই নির্দেশের পর ১৮ দিনেও ওই ঘরটি উচ্ছেদ হয়নি।

ওই সভায় সংসদ সদস্য বলেন, তবে উচ্ছেদের হাত থেকে বাঁচতে ওই বিদ্যালয়ের কিছু জায়গায় এখনো অবৈধভাবে দখল করে রাখা হয়েছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানার ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ অফিস বানিয়েছেন।

ওই অবৈধ দখলকারীকে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়ে নিক্সন চৌধুরী বলেন, সেখান থেকে সম্মানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরিয়ে নিয়ে ওই অবৈধ স্থাপনা আগামী তিন দিনের মধ্যে উচ্ছেদ করতে হবে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ছবি যাঁরা ব্যবহার করে এ উচ্ছেদ অভিযান বাধাগ্রস্ত করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিন্টু মণ্ডলকে নির্দেশ দেন সংসদ সদস্য।

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে অবৈধ দোকানঘর উচ্ছেদ। গত ২৬ জুলাই এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়

এদিকে ওই ১৪টি স্থাপনা ভাঙার তীব্র বিরোধিতা করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার বেলা দেড়টার দিকে চরভদ্রাসনের গাজীরটেক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে চর হাজীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কাজী জাফর উল্যাহ। সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল গনি। বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ইসাহাক মিয়া ও যুগ্ম আহ্বায়ক আহসানুল হক। ২৬ জুলাইয়ের অভিযানে আহসানুল হকের দোকানঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘আমি জানতে চাইব, যখন বাংলাদেশের অর্থনীতি একটা মারাত্মক কঠিন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, সেই মুহূর্তে দোকানপাট ভেঙে ফেললে তাঁরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন? খেটে খাওয়া মানুষ যাঁরা এখানে দোকান করেন, তাঁদের পরিবার চালান, তাঁদের তো যাওয়ার একটা জায়গা থাকতে হবে।’

ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) আসনের তিনটি উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা জাফর উল্যাহপন্থী ও নিক্সনপন্থী এই দুই ভাগে বিভক্ত।

কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ করি। গরিব-দুঃখী মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে ভোট দেন। তাই আমরা সরকার গঠন করার সুযোগ পাই। এই বিপদের সময়ে গরিব মানুষের দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। আর যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুটপাট করে নিয়ে সরকারের টাকা ফেরত দিচ্ছে না, তাদের কিন্তু কিছু হচ্ছে না। অথচ গরিব মানুষের পেটে লাথি মেরে তাঁদের কষ্ট দেওয়া হচ্ছে।’

এ ঘরগুলো ভাঙার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন—এমন মন্তব্য করে কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে যাঁরা জড়িত, তাঁদেরকেও চিহ্নিত করা প্রয়োজন। কারণ, গরিব মানুষের প্রতি যদি ভালোবাসা না থাকে, এ কঠিন সময়ে তাঁদের পাশে যদি দাঁড়াতে না পারি, তাহলে রাজনীতি করার কোনো অর্থ হতে পারে না।’

২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মজিবুর রহমান চৌধুরী। সেই থেকে ওই আসনের তিনটি উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা জাফর উল্যাহপন্থী ও নিক্সনপন্থী এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন।