রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলায় ট্রান্সফরমার চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে গুরুতর আহত এক যুবকের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। নাজমুল মোল্লা (৩৫) নামের ওই যুবক ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার পূর্ব গাড়াখোলা গ্রামের মৃত আহম্মদ মোল্লার ছেলে।
গতকাল শনিবার ভোরে কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের হরিণবাড়িয়া গ্রামে ট্রান্সফরমার মাথায় করে পালানোর সময় এলাকাবাসীর হাতে গণপিটুনির শিকার হন নাজমুল। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা নিকটাত্মীয় নজরুল কাজীসহ অপর একজন পালিয়ে যান। এ ঘটনায় শনিবার রাতেই নিহত যুবকের স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় ৯০ থেকে ১০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল ভোর চারটার দিকে হরিণবাড়িয়া গ্রামে তিন ব্যক্তিকে পল্লী বিদ্যুতের একটি ট্রান্সফরমার নিয়ে পালাতে দেখে স্থানীয় লোকজন ধাওয়া দেন। দুজন পালিয়ে গেলেও মাথায় ট্রান্সফরমার থাকায় পালাতে না পেরে লোকজনের হাতে ধরা পড়েন নাজমুল। এ সময় তাঁকে মারধর করা হয়। লোকজন সেখান থেকে স্থানীয় মাধবপুর রাজধানী বাজারে এনে দ্বিতীয় দফা পিটুনি দেন নাজমুলকে। গুরুতর আহত হলে স্থানীয় কয়েকজন ভ্যানে করে তাঁকে কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের সামনে ফেলে যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করলে বেলা একটার দিকে তিনি মারা যান।
কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, শনিবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন জরুরি বিভাগের সামনে গুরুতর আহত একজনকে রেখে যান। জরুরি বিভাগের লোকজনের সহায়তায় তাঁকে ভর্তি করা হয়। ট্রান্সফরমার চুরির অভিযোগে তিনি গণপিটুনির শিকার হয়েছেন বলে জানান। এ সময় থানা-পুলিশকে ও তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোন নম্বর নিয়ে পরিবারকে জানানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা পৌনে একটার দিকে তিনি মারা যান। ধারণা করা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ অতিমাত্রায় রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
খবর পেয়ে বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত হন নাজমুলের স্ত্রী আন্না বেগমসহ পরিবারের লোকজন। আন্না বেগম বলেন, দুর্ঘটনার আগের দিন নাজমুল তাঁদের নিকট আত্মীয় কালুখালীর মাধবপুরের নজরুল ইসলাম কাজীর বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ট্রান্সফরমার চুরির সন্দেহে তাঁর স্বামীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে রাতেই তিনি থানায় মামলা করেন।
কালুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, আজ রোববার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত নাজমুলের স্ত্রী আন্না বেগম বাদী হয়ে শনিবার রাতেই থানায় ৯০ থেকে ১০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো গ্রেপ্তার নেই।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রেজাউল করিম শনিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, নিহত নাজমুলের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের বিভিন্ন থানায় ১০টি ও রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি থানায় ১টিসহ মোট ১১টি মামলা আছে। এর মধ্যে তিনটি ডাকাতি প্রস্তুতি, ছয়টি চুরি ও একটি মাদকদ্রব্য মামলা। তাঁর আত্মীয় নজরুল কাজীর বিরুদ্ধেও রাজবাড়ীর বিভিন্ন থানায় পাঁচটি ও ফরিদপুরের মধুখালী থানায় একটিসহ মোট ছয়টি চুরির মামলা রয়েছে।