চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীর ইশানবালা খালের মুখে সারবাহী এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সাতজনকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানের (২৬) সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বুধবার সন্ধ্যায় হাইমচর আমলি আদালত-৫-এর বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ফারহান সাদিক এ আদেশ দেন।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) শরীফ মাহমুদ বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চাঁদপুর নৌ পুলিশের পরিদর্শক মো. কালাম খান আসামি আদালতে হাজির করে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে তাঁর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গ্রেপ্তার আকাশ বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর গ্রামের জগদীশ মণ্ডলের ছেলে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-১১ ও ৬-এর যৌথ অভিযানে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ওই জাহাজের লস্কর আকাশ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আজ বুধবার দুপুরে কুমিল্লা নগরের শাকতলা এলাকায় র্যাব-১১-এর সিপিসি-২ কুমিল্লা কার্যালয়ে ব্রিফিং করে ঘটনার বিস্তারিতে তুলে ধরে র্যাব। পরে বিকেলে চাঁদপুরে নৌ পুলিশের কাছে তাঁকে হস্তান্তর করে।
চাঁদপুর নৌ পুলিশের সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাইমচরে জাহাজে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর বেঁচে থাকা জুয়েলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আকাশ মণ্ডলের গতিবিধি নজরদারি করছিলেন তাঁরা। তাঁকে ধরতে গতকাল সারা রাত অভিযান চালায় নৌ পুলিশ ও জেলা পুলিশ। ভোরে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে তাঁকে আটক করে র্যাব। বিকেলে তাঁকে চাঁদপুরে এনে নৌ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কী কারণ, সেটি আটক ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিলে জানা যাবে। তবে ঘটনাটি কোনো ডাকাতি ছিল না। কারণ, যেভাবে কক্ষে কক্ষে রেখে হত্যা করা হয়, সেটি ডাকাতির প্রমাণ করে না। এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।’
এর আগে আকাশকে আটকের পর ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে র্যাব-১১। র্যাবের ভাষ্য, জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় আকাশ মণ্ডল ‘একমাত্র’ খুনি। নিয়মিত বেতন-ভাতা ও ছুটি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি প্রথমে জাহাজের মাস্টারকে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যা করেন। জাহাজের অন্য ব্যক্তিরা জীবিত থাকলে সহজে ধরা পড়ে যাবেন ভেবে বাকি সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। কিন্তু তাঁদের মধ্যে একজন বেঁচে যান।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার বেলা তিনটার পর এমভি আল-বাখেরা জাহাজ থেকে পাঁচজনের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। আর তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় জাহাজের মালিক মাহবুব মোর্শেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চাঁদপুরের হাইমচর থানায় একটি মামলা করেছেন।