কুষ্টিয়ায় সরকারি শিশু পরিবার (বালক) থেকে এক শিশু নিখোঁজ হয়েছে। নিখোঁজের ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনকে জানাননি সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তারা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের চৌড়হাস এলাকায় সরকারি শিশু পরিবার (বালক) চত্বরে বের হয়ে শিশুরা বিক্ষোভ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
গতকাল রাত আটটার দিকে পুলিশ সেখানে দায়িত্বরত উপতত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামান ও সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়।
জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা সূত্র জানায়, নিখোঁজ শিশুর নাম রাইহান হোসেন ওরফে রিজভী (১২)। সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ২ নভেম্বর সে নিখোঁজ হয়। এরপর ৪ নভেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে সমাজসেবা কর্তৃপক্ষ। গতকাল সন্ধ্যায় বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা প্রশাসন অবগত হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও অভিভাবক হলেন জেলা প্রশাসক।
এ বিষয়ে আজ শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানার পর ওই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তাঁরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। শিশুটিকে উদ্ধারে পুলিশ কাজ করছে। এ ছাড়া এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’
হারানো ফুফাতো ভাইয়ের খোঁজে কুষ্টিয়ায় আসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ জোহরা। তিনি বলেন, ২ নভেম্বর তাঁর ভাই নিখোঁজ হলেও তাঁরা জানতে পারেন ৪ নভেম্বর। একই দিন নিখোঁজ রিজভীর ব্যাগ খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসে পাওয়া যায়। তিনি দাবি করেন, তাঁর ভাইকে নির্যাতন করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় শিশু পরিবার প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠানে থাকা সব শিশু বের হয়ে বিক্ষোভ করে। সে সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিক্ষোভের সময় শিশু নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরে।
বিক্ষোভ চলাকালে উপতত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামান বলেন, ২ নভেম্বর দুজন শিক্ষার্থী রাইহান ও নাহিদ প্রধান ফটক দিয়ে বের হয়ে যায়। তাদের সন্ধান না পেয়ে ৪ নভেম্বর থানায় জিডি করা হয়।
সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াসের বিরুদ্ধে শিশুদের ওপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। তিনি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে নাহিদকে মারধরের কথা তিনি স্বীকার করেছেন ইলিয়াস। তিনি বলেন, ‘নাহিদ যেহেতু রাইহানের সঙ্গে গিয়েছিল এবং পরে ফিরে এসেছে, তাই তার কাছ থেকে সত্য তথ্য জানতে মারধর করা হয়েছে। এ জন্য আমি একা দায়ী নই।’
এক শিক্ষার্থী বলে, ‘এখানে আমাদের খুব মারধর করা হয়। পেটভরে খেতে দেওয়া হয় না। কাউকে কিছু বললে মারার হুমকি দেয়।’
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, বিক্ষোভের বিষয়টি জানার পরপরই সেখানে যাওয়া হয়। সবকিছু শোনা হয়। আপাতত দুই কর্মকর্তাকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আসাদুজ্জামান ও ইলিয়াসকে থানায় নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে সিদ্ধান্ত দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।