ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন

কাপড় দেখে মরিয়ম বললেন, লাশটি তাঁর মায়ের

ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় ‘মায়ের লাশ’ শনাক্ত করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মরিয়ম মান্নান ও তাঁর বোনেরা। আজ শুক্রবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বওলা গ্রামের ঝোপ থেকে উদ্ধার হওয়া লাশটি নিজের মায়ের বলে দাবি করেছেন খুলনার দৌলতপুরের মরিয়ম মান্নান। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তিনি ফুলপুর থানায় যান। সেখানে লাশের পরিহিত কাপড় দেখেন। এরপর মরিয়ম দাবি করেন, লাশটি তাঁর মায়ের। পরে মরিয়ম মান্নান ফুলপুর থানায় ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন।

ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, লাশটি মরিয়ম মান্নানের মায়ের কি না, সেটি ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত হওয়া যাবে না। লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে, যে কারণে নমুনা সংরক্ষণ করা আছে। মরিয়ম মান্নানের নমুনা সংগ্রহ করে দুজনের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি লাগবে। আগামী রোববার থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

মরিয়ম মান্নানের সঙ্গে ফুলপুর থানায় যান তাঁর বোন মাহফুজা আক্তার, আদুরী আক্তার ও ভাবী কানিজ ফাতেমা। এ সময় মরিয়ম লাশটি তাঁর মায়ের দাবি করে নিয়ে যেতে চান। মরিয়ম বলেন, ‘আমার মায়ের লাশ নেওয়া ছাড়া আমার আর কোনো কাজ নেই। লাশটি নিয়ে গিয়ে আমি কবর দেব। এরপর আর কিছু চাই না। যেদিন মায়ের লাশ কবর দেব, সেদিনই মামলা তুলে নেব।’

ফুলপুর থানা–পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১০ সেপ্টেম্বর উপজেলার বওলা গ্রামের দারোগা বাড়ির পেছনের একটি ঝোপের ভেতর থেকে লাশের গন্ধ পান গ্রামবাসী। পরে পুলিশ গিয়ে গলিত লাশ উদ্ধার করে। পরিচয় নিশ্চিত হতে না পারায় লাশটি অঞ্জুমানে মফিদুলের মাধ্যমে ফুলপুর উপজেলা সদরের একটি কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়। লাশের পরনে ছিল গোলাপি রঙের সালোয়ার, লাল ও গোলাপি ছাপের কামিজ এবং গাঢ় লাল রঙের ওড়না। উদ্ধার হওয়া ওই লাশের বয়স ৩০ বছরের বেশি হবে।

তবে মরিয়ম মান্নানের মায়ের বয়স ৫২ বলে জানান তিনি। মরিয়ম মান্নান ফুলপুর থানায় যাওয়ার সময় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও র‌্যাব ১৪–এর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। কিন্তু এক ঘণ্টা পরও তিনি বাসায় না ফেরায় তাঁর সন্তানেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। নলকূপের পাশে তাঁদের মায়ের জুতা, ওড়না ও পানির পাত্র পড়ে থাকলেও মাকে তাঁরা খুঁজে পাননি। এ ঘটনায় ওই রাতেই রহিমা বেগমের ছেলে দৌলতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরদিন তাঁর মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পরিচয়ের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ ছাড়া বিষয়টি র‌্যাবকেও জানানো হয়। এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মায়ের সন্ধান চেয়ে ঢাকায় মানববন্ধনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে আসছেন সন্তানেরা।