বরিশাল নগর

সন্ধ্যা নামে পিঠার ঘ্রাণে 

বাংলাবাজার, বান্দরোড, সিটি মার্কেট, মহসিন মার্কেট, বিএম কলেজ রোড, বটতলা, বঙ্গবন্ধু উদ্যান—এসব এলাকায় অসংখ্য পিঠার দোকান।

বরিশাল নগরের চৌমাথা লেকপাড়ে ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান। শনিবার রাতে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

শনিবার, ঘড়ির কাঁটায় রাত সাড়ে ১০টা। দেড় ঘণ্টা পরই পুরোনো বছর শেষ হয়ে আসবে নতুন বছর। নতুন বছর উদ্‌যাপনের আয়োজন চলছে বরিশাল নগরের অলিগলিতে। নগরের চৌমাথা লেকপাড়ে একদল তরুণ সেখানে আয়োজন করেছেন কনসার্টের। পাশেই পিঠার পসরা নিয়ে বসেছেন ভ্রাম্যমাণ দোকানি জাফর মিয়া, রেজাউলসহ বেশ কয়েকজন। ভাপা পিঠা, চিতই পিঠার এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড়।

চুলা জ্বালাতে ব্যস্ত রেজাউল বললেন, ‘পিডা ভাইজ্যা আইজ আউগাইতে পারি না। ১২ কেজি চাউল শ্যাষ। এহন আবার চাউলের গুঁড়া লাগবে, আনতে দিছি।’

বছরের শেষ রাত বলে নয়, শীতের শুরুতেই বরিশাল নগরে সন্ধ্যা নামে বাহারি পিঠার ম-ম গন্ধ মেখে। বাইরে নামলেই বাতাসে ভাসে সুগন্ধি চাল আর পিঠার ঘ্রাণ।

শীতে পিঠা তৈরির প্রচলন দেশে অনেক আগে থেকেই রয়েছে। বরিশাল নগরের অলিগলিতে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বাহারি পিঠার পসরা থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। ভাপা, চিতই, পোয়া, পাটিসাপটা, চটা প্রভৃতি পিঠার জন্য দোকানে ভিড় লেগে থাকে।

নগরের বাংলাবাজার, বান্দরোড, সিটি মার্কেট, মহসিন মার্কেট, বিএম কলেজ রোড, বটতলা, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, কেটিসি—এসব এলাকা ঘুরে অসংখ্য পিঠার দোকান চোখে পড়ে। বাংলাবাজার এলাকায় ভ্যানে চুলা জ্বালিয়ে ভাপা পিঠা বিক্রি করছিলেন যতীন মিত্র ও তাঁর স্ত্রী দুর্গা মিত্র। পিঠা বিক্রি করে চারজনের সংসার ভালোই কাটছে। যতীন আগে একটি প্রকল্পে চাকরি করতেন। মেয়াদ শেষে এখন বেকার। তাই শীতে পিঠা এবং গরমে শরবত বিক্রি করেন। বড় ছেলেকে শহরের একটি কলেজে  ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর পড়াচ্ছেন। আর ছোট ছেলে এবার এসএসসি পাস করেছে।

যতীন-দুর্গা দম্পতি বললেন, প্রতিদিন পিঠা বিক্রি করে ৬০০-৭০০ টাকা আয় হয়। চাল, নারকেল ও গুড়ের দাম বেশি হওয়ায় লাভ কমে গেছে।

নগরের কেটিসি মোড়ে চিতই পিঠা ও ভর্তার দোকান খুলে ব্যবসা করছেন নুরুল ইসলাম ও কমলা বেগম দম্পতি। তাঁদের এ ব্যবসার বয়স ২৭ বছর। নুরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ২০ কেজির বেশি চালের পিঠা বিক্রি করেন। যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার ভালোই চলে যাচ্ছে।

তাঁর স্ত্রী কমলা বেগম নগরের বড় বড় অনুষ্ঠানে গিয়ে পিঠা তৈরি করেন। এতেও ভালো রোজগার হয়। ব্যবসা ছোট হলেও আয় ভালো হওয়ায় তাঁরা ভীষণ খুশি। জীবন নিয়ে আক্ষেপ নেই; বরং আনন্দের সঙ্গে কাজটি করেন—বৃদ্ধ নুরুলের কথায় এমন আভাস পাওয়া গেল।

জ্বলন্ত চুলার ওপরে ইস্পাতের ছাঁচে চিতইয়ের গোলা ঢালতে ঢালতে নুরুল ইসলাম বলছিলেন, ‘ঘরে পিডা বানানোর সুযোগ পায় না বইল্লা পিডা খাওয়ার দিন ফুরাইছিল। এতে অনেকের মনে আক্ষেপ আছিল। কিন্তু মোরা পিডার দোহান দেওনে হেই আক্ষেপ এহন নাই। মানুষ খুশি করন মোহের কতা না! মোরা হেইডা করতে পারছি বইল্লা মনডায় শান্তি লাগে।’