দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপ জেলা ভোলার মনপুরা উপজেলায় বিদ্যুতের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। দিনে এক থেকে দুই ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ না থাকায় সেখানকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনও করেছেন।
মনপুরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মনপুরার আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন ১০-১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। অথচ সেখানে মাত্র ২০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সবাইকে ভাগাভাগি করে দেওয়া হচ্ছে।
মনপুরা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহিরুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলায় বিদ্যুতের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আগে সেখানে দিনে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেওয়া হতো। কিন্তু গত শনিবার মাইকিং করে তিন দিনের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ একদম বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিন দিন পরও সরবরাহ চালু না হওয়ায় তিনি কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে জানতে পারেন, দেড় মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের একটি ছাড়া সব কটি যন্ত্র বিকল হয়ে আছে। সেগুলো ঠিক করার চেষ্টা চলছে। ২০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে যন্ত্র সচল আছে, সেটি দিয়ে দুই-এক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
ইউএনও আরও বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় উপজেলা পরিষদসহ সব বিভাগের কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ ছাড়া কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ইন্টারনেটসহ সব প্রকার ডিজিটাল যোগাযোগ, ব্যাংকিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে।
মনপুরা ওজোপাডিকোর আবাসিক প্রকৌশলী আবদুস সালাম বলেন, মনপুরায় তাঁদের গ্রাহক ৮৫৯ জন। দেড় মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের মধ্যে এখন মাত্র ২০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। ওই ২০০ কিলোওয়াট ভাগাভাগি করে সব গ্রাহককে দেওয়া হচ্ছে। বাকি সব কটি যন্ত্র বিকল। সংস্কারের চেষ্টা চলছে।
হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও হাজিরহাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিজাম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে মনপুরাবাসী।
হাজিরহাট শহরে বসবাসকারী একাধিক চাকরিজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুৎহীন মনপুরার মানুষ বেশ বিপাকে আছে। মোটর দিয়ে পানি তুলতে না পারা, মুঠোফোনে চার্জ দিতে না পারা, টিভি, ফ্রিজ ব্যবহার করতে না পারায় জীবনযাপনের ধরন বদলে যাচ্ছে। অনেকে মনপুরা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরিকল্পনাও করছেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন জায়গায় পদায়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুৎহীন অবস্থায় তাঁদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। এক বছর ধরে সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ থাকে না। রাতে হারিকেন, কুপি জ্বালিয়ে গরমের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। গরমের সঙ্গে মশার কামড়ে অসুস্থ হয়ে অনেককে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালেও বিদ্যুৎ থাকছে না।
বিদ্যুতের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবাও। মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন বলেন, হাসপাতালে সৌর বিদ্যুৎ ও জেনারেটরের ব্যবস্থা আছে। আর ওজোপাডিকো থেকে ২-১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পান। কিন্তু কোনোটিই পর্যাপ্ত নয়। ফলে রোগীদের সেবা ব্যাহত হচ্ছে। অল্প ভোল্টেজের কারণে ফ্যান, যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার ঠিকমতো চলছে না।
ভোলা ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ বলেন, ‘আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে মনপুরার বিদ্যুতের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব বলে আশা করছি।’