ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগী বাড়ছে
 গতকাল তোলা ছবি। প্রথম আলো

বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও এক রোগী মারা গেছেন। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার জালাল ব্যাপারী (৭৫) নামের ওই রোগী মঙ্গলবার সকালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ নিয়ে বিভাগে ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হলো। এঁরা সবাই বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া চারজনের মধ্যে তিনজনই মারা গেছেন গত ২৮ জুন থেকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে। বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত সোমবার সকাল ছয়টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২৯৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের মধ্যে যা এক দিনে সর্বোচ্চ। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ২৭৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গতকাল বিভাগের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭৯৩ জন রোগী। এর মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি আছেন ২২১ জন। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

২৪ ঘণ্টায় বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৩ জন, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫১, বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে ৫২, পিরোজপুরে ৪৫, বরগুনায় ৩১, ভোলায় ২৫ ও ঝালকাঠিতে ১৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বরিশাল বিভাগে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৭২৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন ৪৩৩ জন। চলতি জুলাই মাসের ২৫ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২৮০ জন। চলতি জুলাইয়ের ২৫ দিনেই বিভাগে মোট ডেঙ্গু রোগীর ৮৮ দশমিক ১০ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছেন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত চারজন মারা গেছেন। এর মধ্যে বরিশাল সদর উপজেলার চানপুরা গ্রামের জোছনা আক্তার (৩৫) নামের এক নারী ১৭ জুলাই শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এর আগে ২৮ জুন নাসিমা বেগম (৩৫) নামে পাথরঘাটার এক নারীর একই হাসপাতালে মৃত্যু হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে নাজিরপুরের জালাল ব্যাপারী (৭৫) নামে আরেক রোগীর মৃত্য হলো। এর আগে এপ্রিলে আরেকজন ডেঙ্গুতে মারা যান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে প্রথম ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ওই বছর বিভাগে সাড়ে সাত হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল ১৪ জনের। এর আগে বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের ইতিহাস নেই। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দুই বছর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত বছর বিভাগে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব পুনরায় মারাত্মক রূপ নিয়েছিল। গত বছর বিভাগে তিন হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মারা গিয়েছিলেন ১১ জন।