লঞ্চে নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে বরিশাল নগর ছাত্রদলের সভাপতিসহ আটক ২

বরিশাল জেলার মানচিত্র
বরিশাল জেলার মানচিত্র

বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রেজাউল করিম (৩৬) ও সরকারি হাতেম আলী কলেজ শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব আহাদ হোসেনকে (২৭) আটক করেছেন র‌্যাব-৮–এর সদস্যরা। র‌্যাব বলছে, বরিশাল-ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চে অগ্নিসংযোগের পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। এ ছাড়া গত ২৮ অক্টোবরের পর রাজধানী ঢাকা ও বরিশালের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও সহিংসতার নির্দেশদাতাও ছিলেন রেজাউল।

আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় এ বিষয়ে বরিশালে র‍্যাব-৮ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন।

কমান্ডার মঈন বলেন, সম্প্রতি বরিশাল মহানগর ও বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে কিছু দুষ্কৃতকারী গণপরিবহন; ব্যক্তিগত পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ; বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে অবরোধ ও অগ্নিসংযোগ এবং হামলা–ভাঙচুরসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতা চালায়। এসব ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। দুষ্কৃতকারীরা বরিশাল-ঢাকাগামী লঞ্চে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ভয়াবহ নাশকতা করার পরিকল্পনা করেছিল। এর একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। র‍্যাব তখন নজরদারি বৃদ্ধি করে।

কমান্ডার মঈন আরও বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-৮–এর একটি দল বরিশাল নগরে অভিযান চালায়। এ সময় বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রেজাউল করিম ও সরকারি হাতেম আলী কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব আহাদ হোসেনকে আটক করা হয়। রেজাউল করিম ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে নানা নাশকতা চালিয়েছেন।

তাঁদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রেজাউল করিম ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন এলাকায় সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢাকায় যান। পরে রাজধানীর পল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় গণপরিবহন, ব্যক্তিগত যানবাহনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে নাশকতা সৃষ্টি করেন। এ সময় তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপরও হামলা চালান। পরে বরিশালে ফিরে আসেন।

র‌্যাবের দাবি, রেজাউল করিম শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নির্দেশে বরিশাল মহানগরের দূরপাল্লার পরিবহন, বাসস্ট্যান্ড, গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে নাশকতা ও সহিংসতা চালিয়েছেন। এসব ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তাঁদের দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে পাঠাতেন বলে জানা যায়। রেজাউল করিম তাঁর দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনায় বরিশাল-ঢাকাগামী লঞ্চে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করছিলেন। যাতে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। রেজাউলের বিরুদ্ধে বরিশাল সদর থানায় পাঁচটির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। আটক ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান কমান্ডার আল মঈন।

এদিকে ছাত্রদলের নেতা রেজাউল করিমের মা রাশিদা জাহান বলেন, গত সোমবার রাতে রেজাউল তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। ভোর চারটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে কিছু লোক বাসার মধ্যে ঢুকে রেজাউল ও তাঁর খালাতো ভাইকে তুলে নিয়ে যান। তবে পথে খালাতো ভাইকে ছেড়ে দিয়ে শুধু রেজাউল এবং অপর ছাত্রদল নেতা আহাদকে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে যান।

রাশিদা জাহান আরও বলেন, খবর পেয়ে গতকাল সকালে নগরের বিভিন্ন থানায় খোঁজ নিয়েছেন। তা ছাড়া আটক করা হলে তাঁকে আদালতে চালান করা হবে। এ জন্য আদালতে গিয়েও রেজাউলের বাবা খোঁজখবর নিয়েছেন। কিন্তু থানা-পুলিশ আটকের বিষয়ে তাঁদের কোনো তথ্য দেয়নি।