বয়স প্রায় ১৮ বছর। কিন্তু আনোয়ার হোসেনকে (১৮) দেখে মনে হয়, তিনি পাঁচ থেকে ছয় বছরের শিশু। কণ্ঠস্বর শিশুর মতোই। তবে আচরণে প্রাপ্তবয়স্ক। শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন তিনি।
আনোয়ারের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামে। তাঁর জন্ম ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে। তিনি ওই গ্রামের আমীর হোসেন-নাসিমা খাতুন দম্পতির ছেলে। তাঁর বাবা দিনমজুর। তাঁর মা কাজ করেন স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায়। এই দম্পতির আনোয়ার ছাড়াও নাসির উদ্দিন নামের আরও এক ছেলে আছে। ওই ছেলের বয়স ২৩ বছর।
গত রোববার দুপুরে আনোয়ারের বাড়িতে গেলে তিনি বাড়ির ভেতর থেকে হাঁটতে হাঁটতে বাইরে আসেন। তিনি কুশল বিনিময় করেন। পরে তিনি জানালেন নিজের বেঁচে থাকার অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, বুঝতে শেখার পর থেকেই তাঁর বৃদ্ধি অস্বাভাবিক। শারীরিক দুর্বলতা, ক্ষুধামান্দ্যসহ নানা জটিলতা নিয়ে বেঁচে আছেন। এর মধ্যেই স্কুলেও ভর্তি হয়েছিলেন। স্থানীয় তেলিহাটি উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন তিনি। শারীরিক সমস্যার কারণে বাধ্য হয়ে স্কুল ছাড়তে হয়েছে তাঁকে। তিনি জানান, তিনি কিছুই মনে রাখতে পারেন না। এ ছাড়া পড়াশোনায়ও মনোযোগ বসাতে পারেন না।
আনোয়ারের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন পাশে এসে দাঁড়ালেন মা নাসিমা খাতুন। তিনি বলেন, দারিদ্র্যের কারণে সন্তানের ভালো চিকিৎসা করাতে পারেননি তাঁরা। তবে স্থানীয় কয়েকটি ক্লিনিকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়াছেন। এসব পরীক্ষায় আনোয়ারের শারীরিক কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। চিকিৎসকেরাও তাই কোনো চিকিৎসা দিতে পারেননি।
নাসিমা খাতুন বলেন, তাঁর ছেলে সারাক্ষণ বাড়িতে মনমরা হয়ে বসে থাকেন। কারও সঙ্গে মিশতে চান না। দেখতে অস্বাভাবিক হওয়ায় তাঁর ছেলে মানসিক অস্বস্তিতে ভুগছেন। চলাফেরা করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যান। কিছুই খেতে চান না। সারা দিনে এক-দুবার জোর করে খাওয়াতে হয়। বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, এ ধরনের শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় প্রচুর টাকা খরচ হয়। দিনমজুর পরিবার তাই উন্নত চিকিৎসার সাহস করেননি।
আনোয়ারের স্বজন ও প্রতিবেশী মিলন হাসান বলেন, ছেলেটি সারা দিন চুপচাপ বসে থাকেন। তাঁর শারীরিক গঠনের কারণে সে বাইরেও যেতে চান না। কিছুদিন পরপর অসুস্থ হয়ে যান। তাঁর চিকিৎসা দরকার। সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে সে হয়তো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারত।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার হুজ্জাতুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের সমস্যার চিকিৎসা করলে বিভিন্ন উপসর্গ কমানো সম্ভব। জেনেটিক কারণে এমনটা হতে পারে। হরমোনের কারণেও এটা হয়। তাঁকে উন্নত চিকিৎসা করানো দরকার।