এবার পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে বরগুনা জেলা বাস মালিক গ্রুপ। গাড়ির যন্ত্রাংশের মূল্যবৃদ্ধি, মহাসড়কে তিন চাকার যান বন্ধসহ দুই দফা দাবিতে শুক্র ও শনিবার দুই দিনের ধর্মঘট ডেকেছে তারা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব কথা নিশ্চিত করে বরগুনা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, বরগুনা-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়ক ও বরগুনার অভ্যন্তরীণ সড়কে অবৈধ কয়েক হাজার তিন চাকার যান চলাচল করছে। এসব যান বন্ধের দাবিতে তাঁরা আজ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবারের মধ্যে এসব সড়ক থেকে অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করা না হলে শুক্রবার থেকে বরগুনা জেলার অভ্যন্তরীণ সব রুটের বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালে জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এর আগে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপ শুক্র ও শনিবার দুই দিনের ধর্মঘটের ডাক দেয়। গত ২৫ অক্টোবর ওই ঘোষণা দেয় তারা। পরে তিন চাকার যান, ভোলা ও বরিশাল নৌপথে লঞ্চ এবং স্পিডবোট ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। বরগুনা জেলা বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, শনিবার বরিশালের বিভাগীয় গণসমাবেশ ভন্ডুল করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ইন্ধনে এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁরা অভিযোগ করেছেন, বরিশালের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বরগুনা সদর ও বেতাগী উপজেলায় দলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।
অপরদিকে বরিশালের গণসমাবেশকে সামনে রেখে কয়েক দিন আগ থেকেই বরগুনায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশের তল্লাশি শুরু হয়েছে। গত তিন দিনে গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত এসব তল্লাশি-অভিযান চালানো হয়। তবে পুলিশের দাবি, নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে অভিযানের অংশ হিসেবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেন, পুলিশ তল্লাশির নামে হয়রানি করছে। বিএনপির সমাবেশ বানচাল করতে এসব অভিযান চালানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ এই সমাবেশকে বানচাল করতে এখন পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একাধিক নেতা বলেন, বিএনপির দলীয় বড় কোনো কর্মসূচি কিংবা নির্বাচন এলেই পুলিশ এ রকম তল্লাশি অভিযান শুরু করে। গ্রেপ্তার এড়াতে তখন বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করতে হয়।
বেতাগী উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, গত সোমবার রাতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হুমায়ূন কবির মল্লিক, পৌর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক, মঙ্গলবার রাতে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসেন, নেছার খান, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান জুয়েল, গতকাল বুধবার রাতে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন, সদস্যসচিব মিজানুর রহমান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান বেলালসহ শীর্ষ নেতাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। তবে এ সময় পুলিশ তাঁদের কাউকেই বাড়িতে পায়নি।
বেতাগী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হুমায়ূন কবির মল্লিক বলেন, তিন দিন ধরে গভীর রাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত উপজেলার পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির সিনিয়র নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ অভিযান চালায়। তবে পুলিশ এসব অভিযান করে তাঁদের সমাবেশে যাওয়া ফেরাতে পারবে না।
বেতাগী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি শিক্ষক ট্রেনিংয়ের জন্য বরিশালে অবস্থান করছি। কিন্তু বুধবার রাতে পুলিশ এসে আমার বাসায় তল্লাশি চালায়। আমার বাসায় স্ত্রী ও মেয়ে এতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।’
এ ব্যাপারে বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম হাওলাদার বলেন, ‘বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী নাশকতার জন্য বাড়িতে অস্ত্র মজুত রেখেছে, এমন অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে আমরা তল্লাশি চালিয়েছি। তবে এসব অভিযানে কোনো অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। বিএনপির কোনো নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’
বরগুনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘পুলিশ আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহ ফারুক ও যুগ্ম আহ্বায়ক তালিমুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে বুধবার রাতে তল্লাশি করেছে। আমরা যাতে সমাবেশে আসতে না পারি, সে জন্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নির্দেশে পুলিশ তল্লাশির নামে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে।’
বরগুনা সদর থানার ওসি আলী আহমেদ আজ বিকেলে বলেন, পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে নিয়মিত এমন অভিযান চলছে। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নেই এতে।
বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশে জনসমাগম কম হবে, এটা আঁচ করতে পেরেই দলটির নেতারা মিথ্যা অভিযোগ তুলে এর দায় আওয়ামী লীগের কাঁধে চাপাতে চাইছেন। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ গড়ে উঠেছে। তাই আন্দোলনের ভয়ে ভীত হয়ে বিএনপির সমাবেশে বাধা দেওয়ার অভিপ্রায় আমাদের নেই।’