রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থিত স্বাধীনতা স্তম্ভে জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণর বিরুদ্ধে এ মামলা হয়।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জামিনের আবেদন করা হলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন।
মফিজুর রহমান আরও বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ডিভিশনের আদেশ দেন। একই সঙ্গে চিকিৎসা ও ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, কারাবিধি অনুযায়ী সে ব্যবস্থা নিতে জেল সুপারকে নির্দেশ দেন।
এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণকে আদালতে হাজির করা নিয়ে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাঁর মুক্তির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগানও দেন ভক্তরা।
গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে চট্টগ্রামে আনা হয়।
গত ৩১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন অজয় দত্ত (৩৪), লীলা রাজ দাস ব্রহ্মচারী (৪৮), গোপাল দাস (৩৮), কথক দাস (৪০), প্রকৌশলী অমিত ধর (৩৮), রনি দাস (৩৮), রাজীব দাস (৩২), কৃষ্ণ কুমার দত্ত (৫২), জিকু চৌধুরী (৪০), নিউটন দে (৩৮), তুষার চক্রবর্তী (২৮), মিথুন দে (৩৫), রুপন ধর (৩৫), রিমন দত্ত (২৮), সুকান্ত দাস (২৮), বিশ্বজিৎ গুপ্ত (৪২), রাজেশ চৌধুরী (২৮), হৃদয় দাস (২৫)।
মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর নগরের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্তম্ভের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে, যা এখনো সেখানে রয়েছে। ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে লালদীঘির মাঠে একটি মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ওই সমাবেশে যোগ দেন। ওই দিন চন্দন কুমার ধরসহ ৯ জন আসামির ইন্ধনে বাকি আসামিরা নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্ট স্তম্ভ ও আশপাশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে সেখানে স্থাপন করে দেন। এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ শুনানি শেষে আদালত প্রাঙ্গণে প্রথম আলোকে বলেন, নির্দোষ দাবি করে জামিনের আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে কয়েক দিনের মধ্যে আপিল করা হবে।
ইসকনের প্রতিবাদ
এদিকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসকন বাংলাদেশ। আজ এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানায় ইসকন। সেই সঙ্গে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতনী সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও সহিংসতার প্রতিবাদ জানিয়েছে। ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী এ প্রতিবাদ জানান।