‘শুক্কুরবার থাইকা অল্প অল্প পানি আইতে তাহে। রোববারে সব তলিয়ালছে। অহনও পানি নামতাছে না। আগেও পানি আইছে, আবার নাইমা গেছে। এইরহম বড় বন্যা আর অইছে না।’ আজ বৃহস্পতিবার সকালে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বনপাড়া সেতুর পাশে দাঁড়িয়ে কৃষক ইয়াজুল হক (৫৯) বলছিলেন কথাগুলো।
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলা গত শুক্রবার প্লাবিত হয়। এসব এলাকা থেকে ধীরে ধীরে পানি নামছে। বন্যার ক্ষত বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট রয়েছে সেখানে। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণ বিতরণ করছে।
ফুলপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করেছে ছনধরা, সিংহেশ্বর, ফুলপুর সদর, বালিয়া ও রূপসী ইউনিয়ন থেকে। তবে পাঁচটি ইউনিয়নের ৩২টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দী। শুকনা চিড়া-মুড়ি খেয়ে দিন পার করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে বন্যাকবলিত গ্রামগুলোয়। বন্যার কারণে দুটি মণ্ডপ নির্ধারিত স্থান থেকে সরিয়ে পূজার আয়োজন করা হচ্ছে।
ফুলপুরের সিংহেশ্বর ইউনিয়ের বনপাড়া সেতুর কাছে দাঁড়িয়ে কথা হয় ভাটপাড়া গ্রামের হাসান মিয়ার (৩৬) সঙ্গে। তিনি ঢাকায় রিকশা চালান। এলাকায় পানি আসছে খবর পেয়ে গত রোববার বাড়িতে আসেন। স্ত্রী হাসিনা বেগম, চার ছেলে ও এক মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি ধোবাউড়া উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের মুন্সিরহাট ষোল্যাকান্দে গ্রামে পাঠান। সেখানে তাঁরাও পানিবন্দী। মাকে নিয়ে পানিবন্দী অবস্থায় আছেন হাসান মিয়া। তিনি বলেন, ‘পানিডা দম ধইরা, দম ধইরা নামতাছে।’
আজ সকালে বনপাড়া গ্রামে কথা হয় মফিজ উদ্দিনের (৫৮) সঙ্গে। শ্রমিকের কাজ করেন তিনি। এবার ধান চাষ করেছিলেন ১৩ কাঠা জমিতে, যা পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘গত রোববার থাইকা এলাকাত পানি আইছে। চাইর দিনে আধহাত পানি কমছে। দম ধইরা থাহে পানি। এমন দীর্ঘ বন্যা বন্যা আর অইছে না।’
ফুলপুরের ইউএনও এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সরকারিভাবে ত্রাণ কার্যক্রম তদারক করা হচ্ছে। প্রতিদিন বিভিন্ন দল ত্রাণ দিচ্ছে। বেসরকারি লোকজন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছে।
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বোরাঘাট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হালুয়াঘাট উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। উপজেলার নড়াইল, বিলডোরা ও শাকুয়াই ইউনিয়নে পরিস্থিতি আজ উন্নতির দিকে। উপজেলার অন্য ৯টি ইউনিয়নেও বন্যার পানি নামছে। উপজেলার ২৫টি গ্রামে ২৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী আছে।
অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ধোবাউড়া উপজেলা। পোড়াকান্দুলিয়া, গোয়াতলা ও ধোবাউড়া সদরে ধীরে ধীরে পানি কমছে। এর আগে সাতটি ইউনিয়নের অন্যান্য ইউনিয়নেও পানি কমতে শুরু করে। এ উপজেলায় ৪৫ গ্রামে অন্তত ২৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছে।
ধোবাউড়ার ইউএনও নিশাত শারমিন বলেন, পানি কমতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। বন্যায় কৃষি, মৎস্য, পানিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুর্গত এলাকায় সুপেয় পানির সংকট আছে। যাঁরা ত্রাণ বিকরণ করতে আসছেন, তাঁদের পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।