গণমিছিলে অংশ নেওয়া এক নারী শিক্ষার্থীকে লাঠি হাতে পেটাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের এক কর্মী। শুক্রবার বিকেলে নরসিংদী শহরের উপজেলা মোড় এলাকায়
গণমিছিলে অংশ নেওয়া এক নারী শিক্ষার্থীকে লাঠি হাতে পেটাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের এক কর্মী। শুক্রবার বিকেলে নরসিংদী শহরের উপজেলা মোড় এলাকায়

নরসিংদীতে পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের গণমিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা, আহত ১০

নরসিংদীতে পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা চালিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গণমিছিল ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গণমিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা শহরের উপজেলা মোড় এলাকায় গেলে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের গণমিছিল নিয়ে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেওয়ার কথা ছিল। এ উপলক্ষে দুপুর থেকেই শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ব্রাহ্মনদী এলাকায় জড়ো হন। বেলা আড়াইটার দিকে গণমিছিল নিয়ে উপজেলা মোড়ের প্রেসক্লাব অভিমুখে রওনা হন। সেখানে আগে থেকেই জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, মহিলা লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়েছিলেন।

বেলা তিনটার দিকে গণমিছিলটি নরসিংদী প্রেসক্লাবের কাছে উপজেলা মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। বাধা পেয়ে সেখানে দাঁড়িয়েই পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন নারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এস এম কাইয়ুম তাঁদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেন। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন আওয়ামী লীগ, মহিলা লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

এরপরই পুলিশ সদস্যদের ভেদ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদেরও পেটাতে দেখা যায়। হামলায় নারী শিক্ষার্থীসহ ১০ জন আহত হন। তাঁদের স্থানীয় বিভিন্ন ফার্মেসিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পুরো সময় পুলিশ সদস্যদের নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

গণমিছিলে হামলার সময় পুলিশ সদস্যদের নির্বিকার দেখা যায়

এস এম কাইয়ুম ছাড়াও নেতা-কর্মীদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসমিন সুলতানা, শহর যুবলীগের সভাপতি বিপ্লব সরকার ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল ভূঁইয়া, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন, সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল আহমেদ প্রমুখ। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করার পর তাঁরা লাঠিসোঁটা হাতে মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন নরসিংদী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিন ও নরসিংদী আদালতের আইনজীবী শিরিন সুলতানা। নাদিরা ইয়াসমিন বলেন, ‘গতকাল দুপুরে আমরা আদালত চত্বরে যেতে চেয়েছিলাম, পুলিশ বাধা দিয়েছে। আজ আমরা প্রেসক্লাবের সামনে যেতে চেয়েছিলাম, পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ হামলা চালিয়েছে। এভাবে বাধা দিয়ে কত দিন রাখতে পারবে তারা?’

জানতে চাইলে এস এম কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেখানে অবস্থান নিয়েছিলাম শান্তিপূর্ণভাবে বুঝিয়ে তাঁদের ফেরত পাঠাতে। তাঁরা আমার অনুরোধ রাখেননি। আমাদের কোনো কথাই তাঁরা শুনছিলেন না। একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপরই তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া দেওয়া হয়। যাঁরা আহত হয়েছেন, দাঁড়িয়ে থেকে তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছি।’

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ জানান, বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ কিছু করেনি।