ময়মনসিংহ নগরের রহমতপুর বাইপাস এলাকায় ফিলিং স্টেশনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। গতকাল সোমবার বিকেলে
ময়মনসিংহ নগরের রহমতপুর বাইপাস এলাকায় ফিলিং স্টেশনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। গতকাল সোমবার বিকেলে

ময়মনসিংহে দুর্ঘটনাকবলিত ফিলিং স্টেশন থেকে বের হচ্ছে গ্যাস, চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

ময়মনসিংহ নগরে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে বিস্ফোরণের পর থেকে গ্যাস নির্গত হচ্ছে। এ অবস্থায় সেখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে। সে কারণে সিএনজি পাম্পটির ৫০০ মিটার এলাকায় যানবাহন ও মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

গতকাল সোমবার রাত ১১টার দিকে জেলা প্রশাসন থেকে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুফিদুল আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ডের পর দুর্ঘটনাস্থল থেকে এখনো গ্যাস নির্গত হচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে যেকোনো সময় সেখানে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৪ নভেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঘটনাস্থলের ৫০০ মিটার পর্যন্ত সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল ও জনসাধারণের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে।

এর আগে গতকাল বেলা পৌনে তিনটার দিকে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কে ময়মনসিংহ নগরের রহমতপুর বাইপাস এলাকায় আজহার ফিলিং স্টেশনে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গ্যাস দেওয়ার সময় গ্যাস লিকেজ থেকে হঠাৎ বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে সাতটি গাড়ি ভস্মীভূত হয়। এর মধ্যে একটি প্রাইভেট কার, তিনটি সিএনজিসহ অন্যান্য গাড়ি আছে।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট টানা দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের ময়মনসিংহের উপসহকারী পরিচালক মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গ্যাস দেওয়ার সময় লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনাস্থলে পুড়ে অঙ্গার প্রাইভেট কারচালকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তিরা হলেন প্রাইভেট কারচালক সদর উপজেলার কিছমত গ্রামের বাসিন্দা মো. হিমেল (২৬) ও রহমতপুর এলাকার আবদুল কুদ্দুস (৮৫)। ঘটনাস্থলে হিমেল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যার সাতটার দিকে আবদুল কুদ্দুস মারা যান। গুরুতর অবস্থায় পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেলে ও দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম খান বলেন, নিহত দুজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

এ দিকে দুর্ঘটনার পর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন্নাহার নাহারকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নিহতের সংখ্যা বেড়ে তিন

ময়মনসিংহ নগরে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে বিস্ফোরণে আরও একজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা তিনজনে দাঁড়িয়েছে।

দুর্ঘটনায় আগুনে দগ্ধ তোফাজ্জল হোসেনকে (৪৫) গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। তোফাজ্জল ময়মনসিংহ সদর উপজেলার নিজকল্পা গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল রাত ১১ টার দিকে দিকে তিনি মারা যান।

পুলিশ জানিয়েছে, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আবুল হোসেন (৪৫), চা দোকানি আব্দুল মালেক (৫০), মো. কামরুল (৩২) ও তাঁর স্ত্রী মোছা. সুমি আক্তার (৩০) । সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম (৩৫) ও আনোয়ার হোসেন (২৫) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, নিহতের সংখ্যা তিনজনে দাঁড়িয়েছে। ঘটনাস্থালে আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত গ্যাস নির্গত হচ্ছিল। মরদেহগুলো মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস অবস্থান করছে।