নরসিংদীর পলাশ উপজেলার জুয়া খেলা নিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় দুই নেতার সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত মামুন মিয়া (২৫) নামের এক তরুণ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ঘটনার তিন দিন পর আজ শুক্রবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত মামুন উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজীরচর গ্রামের কিরণ মিয়ার ছেলে। সংঘর্ষে আহত হওয়ার পর থেকে মামুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি ডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সাবের উল হাইয়ের সমর্থক ছিলেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজীরচর গ্রামে জুয়া খেলায় টাকা ধার না দেওয়ায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হন। এ ঘটনায় ওই রাতেই মামুনের বাবা কিরণ মিয়া বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে কাজীরচর গ্রামে একদল ব্যক্তি জুয়া খেলছিলেন। খেলার আসরে টাকা ফুরিয়ে গেলে একজন অন্য ব্যক্তিদের কাছে কিছু টাকা ধার চান। এ সময় কেউ ধার না দেওয়ায় এ নিয়ে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাঁরা আরও লোকজন ডেকে এনে সংঘর্ষে জড়ান। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের ঢাকা, গাজীপুর ও নরসিংদীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংঘর্ষের সময় এক পক্ষে ছিলেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলুর সমর্থকেরা। অন্য পক্ষে ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবের উল হাইয়ের সমর্থকেরা। আহত ১২ জনের মধ্যে ৮ জন সাবের উল হাইয়ের সমর্থক। বাকি চারজন দেলোয়ার হোসেনের সমর্থক। স্থানীয় সূত্র জানায়, ডাঙ্গা ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে ওই দুই নেতার মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। তাঁদের সমর্থকেরা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে প্রায়ই সংঘাতে জড়ান।
জানতে চাইলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবের উল হাই প্রথম আলোকে বলেন, ‘টাকা ধার না দেওয়ায় দেলোয়ারের চাচাতো ভাই সিরাজ, ভাতিজা রাজন ও ভাগনে সোহেলের নেতৃত্বে মামুনসহ আটজনকে মারধর করা হয়। ঢাকায় তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ মামুন মারা গেছেন। তিনি আমার একজন ভালো কর্মী ছিলেন। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল দিলেও তিনি ধরেননি।
মামুনের বাবা কিরণ মিয়া বলেন, ছেলের লাশ এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা আছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করার কথা। লাশ বুঝে পেলে বাড়িতে ফিরবেন। তুচ্ছ ঘটনায় তাঁর ছেলেকে যাঁরা মারধর করে মেরে ফেলেছেন, তাঁদের বিচার চান তিনি।
পলাশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুরুতর আহত মামুন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাঁর বাবার করা মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।