যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার টুটুল সরকার। শনিবার রাতে উত্তরা পূর্ব থানায়
যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার টুটুল সরকার। শনিবার রাতে উত্তরা পূর্ব থানায়

টঙ্গীর খেয়াঘাট থেকে মাঝিদের উচ্ছেদ করা সেই ‘প্রভাবশালী’ গ্রেপ্তার

গাজীপুরের টঙ্গীবাজার খেয়াঘাটে দরিদ্র মাঝিদের উচ্ছেদ, খেয়া পারাপারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, দোকান থেকে চাঁদা আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত স্থানীয় ‘প্রভাবশালী’ ও আওয়ামী লীগের নেতা টুটুল সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী।

গতকাল শনিবার রাতে খেয়াঘাটের আইচি ঘাট এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আজ রোববার সকালে তাঁকে টঙ্গী পূর্ব থানায় হস্তান্তর করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন এক ব্যক্তি।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও খেয়াঘাটের মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তুরাগ নদের টঙ্গীবাজার খেয়াঘাটে প্রায় ৩০ বছর ধরে নৌকা চালাতেন ৬০ মাঝি। সেই আয় দিয়েই সংসার চালাতেন তাঁরা। এর মধ্যে হঠাৎ তাঁদের জীবনে কালো ছায়া হয়ে আসেন টুটুল সরকার। তিনি ঘাটের ইজারা পেয়ে গত ১ জুলাই সব নৌকা চলাচল বন্ধ করে দিয়ে নিজ ব্যবস্থাপনায় ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নামিয়ে মানুষ পারাপার শুরু করেন। এতে কাজ হারিয়ে বেকায়দায় পড়েন মাঝিরা।

এ ছাড়া নদী পারাপারে সরকার নির্ধারিত ভাড়া পাঁচ টাকা হলেও টুটুল সরকার দাপট দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ১০ টাকা করে আদায় করছিলেন। পাশাপাশি নদের পাড়ের দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। এসব বিষয়ে প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশের পর ১৪ জুলাই টঙ্গী নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ তিন দিনের মধ্যে মাঝিদের কাজ ফিরিয়ে দেওয়াসহ সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায়ের নির্দেশ দেয়। কিন্তু টুটুল সরকার সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেননি। পরে কাজ ফিরে না পেয়ে মাঝিরা গ্রামে চলে যান।

গ্রেপ্তারের বিষয়ে টঙ্গী পূর্ব থানা-পুলিশ জানায়, গতকাল সন্ধ্যার পর খেয়াঘাটের দক্ষিণ পাড়ে (আইচি ঘাট) ছিলেন টুটুল সরকার। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালান সেনাবাহিনীর আশকোনা ক্যাম্পের একদল সেনাসদস্য। সেখান থেকে টুটুলকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরা পূর্ব থানায়। পরে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ তাঁকে টঙ্গী পূর্ব থানায় হস্তান্তর করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আরিফুর রহমান খান নামের এক ব্যক্তি চাঁদাবাজির মামলা করেছেন বলে জানায় পুলিশ।

টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কায়সার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেয়াঘাট নিয়ে টুটুল সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন আরিফুর রহমান খান নামের তাঁর পূর্বপরিচিত একজন। ঘাটের ইজারার টাকা নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। আমরা এরই মধ্যে টুটুল সরকারকে আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

টুটুল সরকার স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন সরকারে চাচাতো ভাই। এসব কারণে এলাকায় ব্যাপক প্রভাব খাটাতেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় লোকজন।