পদ্মা সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ চালক তিন মাস পরে থানায় হাজির

পদ্মা সেতুর রেলিংয়ে উঠে নদীতে ঝাঁপ দেন অটোরিকশাচালক
ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে পদ্মা সেতুতে উঠে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া চালক তিন মাস পরে থানায় এসে হাজির হয়েছেন। তাঁর নাম মো. শরিফুল ইসলাম। গতকাল রোববার দুপুরে পদ্মা সেতুর উত্তর থানায় জব্দ রিকশাটি নিতে এসে নিজেকে সেই নিখোঁজ চালক বলে পরিচয় দেন তিনি।

গত ১৯ জুন পদ্মা সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হন শরিফুল ইসলাম নামের ওই চালক। এ ঘটনায় কয়েক দিন উদ্ধারকাজ চালিয়ে তাঁর খোঁজ পায়নি নৌ পুলিশ। ঘটনার তিন মাসেরও বেশি সময় পর রিকশাটি নিতে এলে শরিফুল বেঁচে আছেন বলে জানান পদ্মা সেতুর উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন।

শরিফুল ইসলামের বাড়ি বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের জিন্নাত আলীর ছেলে। শরিফুল ঢাকার হাজারীবাগে থেকে রিকশা চালাতেন।
পুলিশ বলছে, ঘটনার দিন রাতে পারিবারিক কলহের জেরে হাজারীবাগের বাসা থেকে রিকশা নিয়ে বের হন শরিফুল। তিনি ঢাকা থেকে বাগেরহাটে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে চেয়েছিলেন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত হয়ে তিনি রিকশা চালিয়ে পদ্মা সেতুর ওপরে ওঠেন। একপর্যায়ে একটি গাড়ির সঙ্গে রিকশাটির ধাক্কা লাগলে নিরাপত্তাকর্মীরা বুঝতে পারেন। তাঁকে ধাওয়া করলে তিনি ভয়ে রিকশা রেখেই সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দেন।

তবে শরিফুল ইসলামের ভাষ্য, ‘আমি ঝাঁপ দিইনি। চোখে ঘুম ছিল। দুর্ঘটনার পর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। নদীতে পড়ে যাই। জিহ্বার মধ্যে রডের আঘাত পাই। নদীতে পড়ার পর রাতভর ভেসে ছিলাম। আমি কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাইনি। নিজের মতো করে সাঁতার কাটছিলাম। ভোরে দূরের একটি এলাকায় গিয়ে উঠি। বাসে উঠে বাড়িতে গিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিছুদিন ভর্তি ছিলাম। আমি এখনো অসুস্থ।’

এত দিন পর থানায় রিকশা নিতে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রিকশাটি কিনতে শ্বশুরবাড়ির সহায়তা ও কিস্তি নিয়েছিলাম। সেতু থেকে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন কেউ বিশ্বাস করছিলেন না। সবাই বলছিলেন, অটোরিকশাটি আমি বিক্রি করে দিয়েছি। আমি চোর। এ নিয়ে আড়াই মাস ধরে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হওয়ার মতো অবস্থায়। কিছু দিন আগে জানতে পারি, রিকশাটি থানায় আছে। চোরের অপবাদ থেকে বাঁচতে থানায় এসেছি।’

শরিফুলের শ্বশুর মোহাম্মদ দাউদ মোল্লাহ বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের কাছে বলার পর আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি। পদ্মা নদীতে পড়ে কেউ বেঁচে ফিরতে পারে না। শরিফুলের মানসিকভাবে কিছু সমস্যা ছিল। এখন থানায় এসে দেখলাম, রিকশাটি তাঁরই। এখন বিশ্বাস হচ্ছে।’

পদ্মা উত্তর থানার ওসি আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যাচাই-বাছাই করে শনাক্ত করা হয়েছে, এই ব্যক্তি সেতু থেকে লাফ দেওয়া শরিফুল। রিকশাটি পুলিশের কাছে ছিল। তবে এ ঘটনায় মাদারীপুরের শিবচর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তাই তাঁকে শিবচর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁর রিকশা তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।