বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও আম্রপালি জাতের আমের ফলন পাওয়া যাবে আগস্ট, সেপ্টেম্বর কিংবা আরও পরে। চাষিরা দামও বেশি পাবেন।
দেশের অন্যতম আম উৎপাদকারী জেলা নওগাঁয় দিন দিন বাড়ছে আম চাষের পরিধি। এ জেলায় সাধারণত জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাই পর্যন্ত আমের ভরা মৌসুম থাকে। এ সময়ে বাজারে আমের সরবরাহ বেশি হওয়ায় চাষিরা ভালো দাম পান না। তবে বিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেরিতে আমের ফলন পাচ্ছেন সাপাহার উপজেলার দোয়াশ গ্রামের রায়হান আলম (৪৫)। এতে তিনি আমের দাম পাচ্ছেন বেশি।
বারোমাসি জাতের বাইরে বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও আম্রপালি জাতের আমে এ সাফল্য পেয়েছেন রায়হান আলম। স্বাভাবিকভাবে বারি-৪ ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো জুলাইয়ে শেষ হয়ে যায়। আর আম্রপালি জুলাই মাসের মাঝামাঝি শেষ হয়। তবে আগস্ট, সেপ্টেম্বর কিংবা আরও পরে ওই তিন জাতের আমের ফলন পাওয়া যাচ্ছে। মূলত গাছে মুকুল আসার সময় বিলম্বিত করে দেরিতে ফলন পাচ্ছেন রায়হান আলম।
পোরশা উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ছাওড় ইউনিয়নের বন্ধুপাড়া এলাকায় অবস্থিত রায়হান আলমের মিশ্র ফলের বাগান। ওই বাগানে আম ছাড়াও ড্রাগন ও পেয়ারার গাছ রয়েছে। ওই বাগানের ১৫০টি বারি-৪, ৩০টি ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও ২০টি আম্রপালি গাছ থেকে অসময়ে আম পাওয়া যাচ্ছে।
এবার ভরা মৌসুমে প্রতি মণ বারি আম-৪ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। অসময়ে রায়হানের বাগানে উৎপাদিত সেই আম এখন চার গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অসময়ে উৎপাদিত প্রতি মণ বারি আম-৪ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১২ হাজার টাকায়। ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও আম্রপালি সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পরিপক্ব হবে।
গত মঙ্গলবার পোরশার সারাইগাঁছী-আড্ডা সড়কের পাশে বন্ধুপাড়া মোড়সংলগ্ন ওই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝুলছে ডাঁসা ডাঁসা বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও আম্রপালি আম। কিছু গাছে ছোট ছোট আমের গুঁটি। আবার কিছু গাছে মুকুল এসেছে। অর্থাৎ বাগানটি থেকে অন্তত আরও তিন মাস আম পাওয়া যাবে।
রায়হান আলম বলেন, ২০১৯ সালে বন্ধুপাড়া এলাকায় ৫০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সেখানে আম, পেয়ারা ও ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে তোলেন তিনি। শুরুতে বাগানে নাবি জাতের গৌড়মতি আমের গাছ লাগান। পরে গৌড়মতি জাতের কিছু গাছের ডাল কেটে ওই সব ডালে কলম করে বারি আম-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও আম্রপালি জাতে রূপান্তরিত করেন। মৌসুমের আম অমৌসুমে নেওয়ার জন্য চলতি বছর আমগাছে মুকুল আসার এক মাস আগে বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও আম্রপালি আমগাছের ডগা তিনি ভেঙে দেন।
এরপর গাছের গোড়ায় রাসায়নিক ও জৈব সার ব্যবহার করেন। এ ছাড়া কৃষি বিভাগের পরামর্শে এক ধরনের হরমোন খুব সীমিত পরিমাণে গাছে ব্যবহার করেন। এতে করে ওই সব গাছে মার্চের পরিবর্তে মে মাসের দিকে মুকুল আসে। সেই মুকুলের আম এখন বড় হয়েছে। বারি-৪ গাছ থেকে গত সোমবার ছয় মণ আম বিক্রি করেছেন। প্রতি মণ আম ১২ হাজার ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ মৌসুমের সময় এই আমই বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়।
এর আগে বারোমাসি বারি-১১ ও কার্টিমন জাতের আমে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে অসময়ে আম হয়েছিল। তবে নওগাঁতে বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও আম্রপালি আমে এ পদ্ধতি প্রথমবারের মতো কৃষি উদ্যোক্তা রায়হান আলম ব্যবহার করে সফল হয়েছেন। রায়হানের সফলতা দেখে অন্য আমচাষিরা এই পদ্ধতিতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘সিজনের সময় আমগাছে মুকুল এলে সেই মুকুল ও আমগাছের ডগা কেটে গেলে ওই সব গাছে ঠিক দুই মাস পরে আবারও মুকুল আসবে। এভাবে মুকুল ধরা বিলম্বিত করে বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও আম্রপালি আম অমৌসুমে উৎপাদন করা সম্ভব। তবে আমগাছ বেশি বয়সী না হলে আমরা চাষিদের হরমোন ব্যবহার করতে নিষেধ করি। কারণ, এতে করে আমগাছের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’