বরিশাল নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) বিশাল এলাকাজুড়ে চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ। শনিবারের সমাবেশ সামনে রেখে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেখানে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিচ্ছেন। দলে দলে নেতা-কর্মীরা এসে মিছিল আর স্লোগানে মুখর করে রেখেছেন পুরো উদ্যান।
আজ বিকেলে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে চলছে গণসমাবেশের মঞ্চ নির্মাণের কাজ। অন্যদিকে ব্যানার–ফেস্টুন লাগাচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। মাঠ প্রস্তুত করতে শ্রমিকেরা বালু ফেলছেন, মাঠে জমে থাকা বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের কাজ চলছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতারা এবং বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতা-কর্মীরা এরই মধ্যে সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছেন।
পরিবহন ধর্মঘটের কারণে শুক্রবার থেকে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকার শঙ্কায় সমাবেশের দুই দিন আগে বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা-কর্মীরা চলে এসেছেন বরিশালে। ঢাকা থেকেও অনেকে এসেছেন। তাঁরা বলছেন, ধর্মঘটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের বাধা ও পুলিশি হয়রানি। এ কারণে আগেভাগে তাঁরা বরিশালে এসে অবস্থান নিয়েছেন।
পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে আসা যুবদল কর্মী সাদিকুর রহমান বলেন, ‘বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় দুই দিন আগে বরিশালে এসেছি। কোনো হোটেল খালি না থাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছি।’ বরগুনা থেকে আসা ছাত্রদল নেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের নিয়ে বুধবার রাতে বরিশালে এসেছি। দুই দিন আগে থেকে হোটেল বুকিং দিয়ে রাখায় কোনোরকমে রুম পেয়েছি। জানি না, হোটেলে থাকতে পারব কি না।’
ঢাকা থেকে আজ বিকেলে বরিশাল এসেছেন পাথরঘাটা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুল সজিব। তিনি বলেন, ‘আগেভাগে এসে গেছি। আমাদের এলাকার হাজার দেড়েক নেতা-কর্মী ইতিমধ্যে চলে এসেছেন। রাতের মধ্যে আরও অনেকে চলে আসবেন।’
ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. আবু জাফর দিদার বলেন, ‘লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় কোনোরকমে নৌকা দিয়ে ফেরিতে পার হয়ে বরিশাল পৌঁছেছি। আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে ফেরির স্টাফরা জোর করে নামিয়ে দিয়েছেন।’
ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. মোসলেহ উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘কোনো হোটেল খালি পাইনি। আজ রাতে নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠেই থাকব। জানি, হোটেলে খাবার থাকবে না। এ জন্য আমাদের নেতারা মাঠে খাবারের ব্যবস্থা করবেন।’
দলীয় নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, নৌ–যোগাযোগনির্ভর ভোলা জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি নেতা-কর্মী আগেভাগে বরিশালে এসেছেন। এ জেলায় লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল আজ সকাল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে নৌকা ও ট্রলার নিয়ে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী বরিশালে এসে অবস্থান নিয়েছেন।
গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির মিডিয়া উপকমিটির সদস্যসচিব আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের অপকৌশলের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পাল্টা জবাব দিতে দুই দিন আগে মাঠে এসেছেন। সরকার কোনো বাধা সৃষ্টি করে বরিশালের গণসমাবেশ বানচাল করতে পারবে না।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব–উন–নবী খান আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, এ সমাবেশ জনগণের। তাই জনগণ কীভাবে কোথা থেকে আসবে, সেটা তারাই ঠিক করে নিচ্ছে। যে দেশে আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দল আছে, সে দেশে কোনো কিছুই ভালোভাবে করা যায় না। এটা দেশের মানুষ জেনে গেছে। তিনি বলেন, ‘এ সরকার জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে বলেই জনগণকে ভয় পাচ্ছে। বরিশালের সমাবেশ কেন্দ্র করে যে ন্যক্কারজনক হামলা ও পাতানো ধর্মঘট দেখলাম, তা নজিরবিহীন। গণতন্ত্রের ওপর এর চেয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপ আর থাকতে পারে না।’
হাবিব-উন-নবী খান আরও বলেন, ‘আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম, সেখানে আমাদের বেশ কিছু আহত নেতা-কর্মী চিকিৎসাধীন। এত কিছুর পরও এই সমাবেশ হবে দেশের সবচেয়ে বৃহত্তর সমাবেশ।’
এদিকে ৪ ও ৫ নভেম্বর বরিশালে একই সঙ্গে বাস, তিন চাকার যান ও লঞ্চ বন্ধে জনমানুষের চরম ভোগান্তির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গণসংহতি আন্দোলন। আজ গণসংহতি আন্দোলনের বরিশাল জেলা আহ্বায়ক দেওয়ান আবদুর রশিদ ও সদস্যসচিব আরিফুর রহমান এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, টানা দুই দিন বাস, লঞ্চ ও থ্রি–হুইলার বন্ধের ঘোষণা দুরভিসন্ধিমূলক। এতে বরিশাল জেলা সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। চিকিৎসাসেবাসহ জরুরি প্রয়োজনে মানুষের চরম ভোগান্তি হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা বলেন, ‘অতীতে একই সঙ্গে টানা দুই দিন সব বাহনের ধর্মঘট কখনো দেখা যায়নি। কিন্তু ৪ ও ৫ নভেম্বর ধর্মঘটসহ বরিশালের সব হোটেল-মোটেলের আবাসন ব্যবস্থাও সীমিত করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে জানা যাচ্ছে। এতে জনভোগান্তি চরম পর্যায়ে যাবে বলে আমরা মনে করি। একই সঙ্গে টানা দুই দিনে সব যানবাহন ধর্মঘটের নিন্দা জানাই।’
গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা সরকারের এ কর্মকাণ্ড গণতন্ত্রের ওপর ঘৃণ্য আঘাত হিসেবেও মন্তব্য করেন।