এমবিবিএস কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে মানসিক রোগে আক্রান্ত হন আবদুল করিম জামাল। একপর্যায়ে তিনি লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়েন। দীর্ঘ চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হন। নানা কাঠখড় পুড়িয়ে তিনি আবার মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। মাঝখানে কেটে যায় প্রায় ২০ বছর। তবে তিনি দমে যাননি। এমবিবিএস চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি উত্তীর্ণ হন। আজ বৃহস্পতিবার থেকে তিনি শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেছেন।
জামালের বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার কামিনীগঞ্জ বাজার এলাকায়। গতকাল বুধবার বিকেলে তাঁর বাসায় বসে কথা হয়। তিনি বলেন, চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। তিনি ১৯৯২ সালে উপজেলা সদরের জুড়ী মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৯৪ সালে ঢাকার তেজগাঁও কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। ২০০১ সালে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে তাঁর মানসিক রোগ দেখা দেয়। কোনোভাবেই তিনি লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে তাঁর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসা শুরু হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তিনি সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত।
জামাল বলতে থাকেন, চিকিৎসা চলতে থাকে তাঁর। দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে একপর্যায়ে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁর ভর্তি বাতিল করে দেয়। সুস্থ হওয়ার পর তিনি আবার লেখাপড়ায় মন দেন। ভর্তির জন্য মেডিকেল কলেজে যান। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছাত্রত্ব ফিরে পেতে বিভিন্ন দপ্তরে ছোটাছুটি করতে হয় তাঁকে। পরে শিক্ষকদের একটি বোর্ড বসে তাঁকে ভর্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে গুনতে হয় জরিমানা। ২০২২ সালের নভেম্বরে তিনি এমবিবিএসের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেন। ৪ মার্চ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়।
দীর্ঘ চিকিৎসায় সিজোফ্রেনিয়াকে জয় করে জামালের এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের বিষয়টি আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন তাদের ওয়েব পেজে তুলে ধরেছে। তারা জামালকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।সাঈদ এনাম, চিকিৎসক ও জামালের বন্ধু
আবদুল করিম জামাল পাস করেন। আনন্দের সেই মুহূর্ত প্রসঙ্গে জামাল বলেন, ‘পাস করব, বিশ্বাস ছিল। ফলাফল দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে যাই। লেখাপড়া বন্ধের প্রায় ২০ বছর পর ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে পাস করলাম। বন্ধু, স্বজন, শিক্ষক—সবাই সাহস জুগিয়েছেন। সবার কাছে কৃতজ্ঞতা। চিকিৎসক হয়ে বাকি জীবন দেশ আর মানুষের সেবায় কাটাতে চাই।’
জামালের বাবা আবদুল মতিন জুড়ী মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তিনি মারা গেছেন। মা জাহানারা বেগমও বেঁচে নেই। তাঁরা সাত ভাই ও চার বোন। জামাল বিবাহিত। সংসারে স্ত্রী ও সাড়ে চার বছরের মেয়ে আছে। এবারের মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় তাঁর বড় বোনের মেয়ে নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
আবদুল করিম জামালের সহপাঠী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাঈদ এনাম বর্তমানে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। জামাল অসুস্থ হওয়ার পর প্রায় ছয় বছর তিনি তাঁর চিকিৎসা করেন। সাঈদ এনাম বলেন, ‘বিষণ্নতা অথবা মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবহেলা করা ঠিক নয়। বরং সঠিক চিকিৎসায় তাঁরা সেরে উঠতে পারেন। জামাল এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’
সাঈদ এনাম বলেন, দীর্ঘ চিকিৎসায় সিজোফ্রেনিয়াকে জয় করে জামালের এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের বিষয়টি আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন তাদের ওয়েব পেজে তুলে ধরেছে। তারা জামালকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।